নাটোরের ছোট মহারাজা তাইজুল
নিজস্ব প্রতিবেদক, নাটোর। ।
নাটোরের ক্রিকেট তারকা তাইজুল ইসলামের বোলিং নৈপুন্যে বাংলাদেশ পঞ্চম টেস্ট জয়ের স্বাদে আনন্দে ভাসছে গোটা জেলা। সে শুধু নিজ জেলা নাটোরকেই নয়, উজ্জ্বল করেছে বাংলাদেশের মুখ। গত ২০ অক্টোবর সংঘঠিত দেশের স্মরণকালের ভয়াবহ দুর্ঘটনার ব্যথা মুছে দিয়ে সোমবার নাটোরের মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছে এই তরুণ ক্রিকেটার। কষ্ট ভুলে এখন আনন্দে মেতে উঠেছে সবাই।
পাড়া, মহল্লাসহ সর্বত্রই চলছে একে অপরকে মিষ্টি খাইয়ে আনন্দ উপভোগ। তাকে নিয়ে গর্ব করছেন তার বাবা মা,সহপাঠিসহ স্বজনরা। জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও গ্রামগঞ্জে চলছে আনন্দ মিছিলসহ আরো অনেক কিছু। অনেকেই তাকে নাটোরের ছোট মহারাজা বলে আখ্যায়িত করছেন। মঙ্গলবার গুরুদাসপুর পৌরসভার মেয়র শাহনেওয়াজ আলী মোল্লা এই তরুণ ক্রিকেটার তাইজুলকে নাটোরের ছোট মহারাজা ঘোষণা দিয়ে কাউন্সিলর ও কর্মচারীদের মাঝে মিষ্টি বিতরণ করেন।
তাইজুলের এই সাফল্যে তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় নাটোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি জেলা প্রশাসক মশিউর রহমান, সংস্থার সহ-সভাপতি পুলিশ সুপার বাসুদেব বণিক ও সাধারন সম্পাদক সৈয়দ মোস্তাক আলী মুুকুল নাটোরের তরুণ এই ক্রিকেটারের সাফল্যে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেছেন, তাইজুল এখন আর নাটোরের নয়, গোটা জাতীর গর্ব। তার এই সাফল্যে নাটোরের মানুষ বড়াইগ্রাম ট্র্যাজেডির কষ্ট ভুলে আনন্দে মেতে উঠেছে।
স্থানীয়রা জানায়, জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ইনিংসে তাইজুল ৩৯ রান দিয়ে নিয়েছে ৮ উইকেট। যা বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম ঘটনা। শুধু তাই নয় ৯ নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে নেমে ১৫ রানে অপরাজিত থেকে তিন উইকেটে বাংলাদেশ দল কে টেষ্ট জিতিয়েছে তাইজুল ইসলাম। দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই বাংলাদেশের টাইগাররা যখন একের পর এক সাজ ঘরে ফিরছে তখন দলীয় অধিনায়কের সাথে নাটোরের এই বা হাতি বলার শেষ বলে বাউন্ডারী মেরে নিজে অপরাজিত থেকে ১৫ রান করে দলকে তিন উইকেটে জিতিয়ে দেয়। এর আগে মাত্র ৩৯ রান দিয়ে একে একে জিম্বাবুয়ের ৮ খেলোয়ারকে সাজ ঘরে ফিরিয়ে দেন এবং খেলায় ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।
খেলা শেষ হওয়ার পরপরই তার নাটোর শহরের কাঠালবাড়িয়ার বাসায় ছুটে যায় ক্রিকেটপ্রেমী অনেক মানুষ। তার বন্ধু ও ভক্তরা মিষ্টি বিতরণ এবং এলাকায় আনন্দ মিছিল করে। সাধারণ মানুষ বাড়িতে গিয়ে তার বাবা ইসকেনদার শেখ ও পরিবারের সদস্যদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। নাটোরের সকল ক্রীড়ামোদি মানুষের মধ্যেও বইছে আনন্দের বন্যা।
তাইজুলের বাবা ইসকেনদার শেখ ছেলের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। তিনি আশা করেন সকলের দোয়ায় একদিন তাইজুল সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে আরো ভালোভাবে তুলে ধরবে। তিনি আরো জানান, ৮ বছর বয়স থেকেই তাইজুলের ক্রিকেট খেলার প্রতি খুব ঝোঁক ছিল।
লেখাপড়ার চেয়ে ক্রিকেট খেলতেই বেশি ভালবাসতো তাইজুল। সংসারে অভাব অনটন থাকলেও কিকেট খেলার জন্য তাকে কখনই বিরক্ত করা হতোনা।
তাইজুলের সহপাঠি সুজন হোসেন লিটন ও জাকির হোসেন নয়ন জানান, সে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের নতুন মুখ। ওয়েষ্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে জানান দিয়েছিলো সেও হতে যাচ্ছে একজন তারকা খেলোয়াড়। সোমবার অনুষ্ঠিত জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই ইনিংসে ১০ উইকেট নিয়ে টেষ্ট জয়ের মূল নায়ক এই তাইজুল। সে যে এমন একটা সাফল্য দেখাবে তা আগে থেকেই অনুমান করেছিলাম। অভাব-অনটনের সংসারে বেড়ে ওঠা তাইজুলের ক্রিকেটের প্রতি আসক্তি এবং কঠোর অনুশীলনই তার এই সাফল্যের মূল কারণ। আমরা তাজুলের জন্য গর্বিত ।
তাইজুলের স্থানীয় কোচ মোস্তাফিজুর রহমান টুলু জানান, এই সাফল্য ধরে রাখতে তাকে দিয়ে বেশি বেশি করে খেলাতে হবে। আর তা হলেই সে একজন বড় মাপের ক্রিকেটার হতে পারবে এবং দেশের সুনাম বয়ে আনবে বলে তার বিশ্বাস।
উল্লেখ্য, গত ২০ অক্টোবর সোমবার বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের বড়াইগ্রাম রেজুর মোড় এলাকায় দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৩৬জন যাত্রী নিহত অন্তত ৪৩ জন যাত্রী মারাত্মক আহত হয়। এর মধ্যে নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলা ১২জন, গুরুদাসপুর উপজেলার ২২জন, চুয়াডাঙ্গার একজন ও ফেনী জেলার একজন নিহত হয়। ওই ঘটনায় গুরুতর আহত হয় ৪৩ জন এবং অপেক্ষাকৃত কম আহত হয় আরো ২৪ জন।
সাম্প্রতিক মন্তব্য