২৪তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব
নিজস্ব প্রতিবেদক, কলকাতা (ভারত)। ।
প্রখ্যাত বলিউড তারকা অমিতাভ বচ্চন বলেছেন, ‘একটি ছবির সাফল্যের সঙ্গে জড়িয়ে থাকেন ওই ছবির কলাকুশলীরা। তাঁদের অবদানকে আমাদের স্বীকৃতি দিতে হবে। বুঝতে হবে তাঁদের ছাড়া ছবি নির্মাণ করা যায় না। একটি ছবির নেপথ্যে জড়িয়ে থাকেন ৪০০-৫০০ কলাকুশলী। এসব কলাকুশলীর নাম ছবির শেষ দিকে থাকলেও দর্শক ছবির সেই অংশ না দেখেই বেরিয়ে যান। এই অভ্যাস বদলানো দরকার।’ আজ শনিবার বিকেলে কলকাতার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে ২৪তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব উদ্বোধন করে এ কথা বলেছেন তিনি। অমিতাভ বচ্চন স্মরণ করেন ক্যামেরাম্যানসহ টেকনিশিয়ানদেরও।
অমিতাভ বচ্চন বলেন, ‘ছবির বহু কলাকুশলী অভিনয়ের আগে পর্দার অন্তরালে থেকে নিজেদের তৈরি করে নিয়েছেন। অভিনেতা হৃতিক রোশন, সিদ্ধার্থ মালহোত্রা, রণবীর কাপুর, পরীণীতি চোপড়া, বরুণ ধাওয়ান, অর্জুন কাপুরের মতো কলাকুশলীরা কাজ করে আজ তারকা হয়েছেন।’ সত্যজিৎ রায়ের ক্যামেরাম্যান ছিলেন সুব্রত মিত্র। তাঁর অবদানের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘বহু অভিনেতা কাজ শিখেছেন পর্দায় আসার আগে। প্রখ্যাত অভিনেতা প্রমথেশ বড়ুয়া ছিলেন চিত্রগ্রাহক। হৃষিকেশ মুখার্জিও ছিলেন চিত্রগ্রাহক। বিমল রায় ছিলেন সহকারী চিত্রগ্রাহক। তাঁরাই একসময় চলচ্চিত্রের শীর্ষে উঠেছিলেন। পরিচালক হয়েছিলেন।’
অমিতাভ বচ্চন বাংলায় ভাষণ শুরু করে বলেন, ‘কলকাতা আমার প্রিয় শহর। আমার প্রথম জীবনের চাকরি এই কলকাতা শহরে। তাই কীভাবে ভুলি কলকাতাকে। আমি মমতাজিকে গত বছরও বলেছিলাম, আর ডাকবেন না আমাকে। কিন্তু শোনেননি তিনি। সোজা বলে দিয়েছেন, এবারও আসতে হবে। তাই আসতে বাধ্য হলাম।’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে শ্রদ্ধা জানিয়ে অমিতাভ বচ্চন ভাষণের একপর্যায়ে ‘সোনার বাংলা’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন।
বাংলা চলচ্চিত্রের শতবর্ষকে সামনে রেখে আজ সন্ধ্যায় কলকাতার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে প্রদীপ জ্বালিয়ে ২৪তম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব উদ্বোধন করবেন বলিউডের বরেণ্য অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন বলিউডের শাহরুখ খান, জয়া বচ্চন, বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ওয়াহিদা রেহমান, মহেশ ভাট, নন্দিতা দাস। অমিতাভ বচ্চন পরপর পাঁচ বছর কলকাতার এই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব উদ্বোধন করলেন।
এই উৎসবে আজ আরও যোগ দিয়েছেন ইরানি পরিচালক মাজিদ মাজিদি, সাইমন বেকারের মতো প্রথিতযশা নির্দেশক। এ ছাড়া টালিউডের তারকা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, মাধবী মুখোপাধ্যায়, গৌতম ঘোষ, রঞ্জিত মল্লিক, প্রসেনজিৎসহ একঝাঁক টালিউড তারকা যোগ দেন উৎসবে।
শাহরুখ খান বলেছেন, ‘কলকাতা আমার ভালো লাগার শহর। ভালোবাসার শহর। ২৭ বছর ধরে চলচ্চিত্রে আছি। ৭০টি ছবি করেছি। আমি খুব ইন্টেলিজেন্ট নই। স্মার্ট নই। আগামী ১০ বছরে এই উৎসবে আমার একটি ছবি যেন আসতে পারে, সেই চেষ্টা করব।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘আমার ছবি তো ভালোবাসেন না। তাই আমার ছবি আসেনি। আমি আমার “জিরো” ছবির ট্রেলার দেখাতে চাই।’ এরপর ‘জিরো’ ছবির ট্রেলার দেখানো হয়।
প্রখ্যাত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘এই উৎসবের দিকে আমরা প্রতিবছর তাকিয়ে থাকি। এটা আমাদের এক গৌরবের উৎসব।’ তিনি পূর্বসূরিদের স্মরণ করে বলেন, ‘এই উৎসবের মধ্য দিয়ে খুলে যাবে এক নতুন জানালা, যেখানে দেখা যাবে বিভিন্ন চলচ্চিত্র।’
ওয়াহিদা রেহমান বলেন, ‘কলকাতায় আসতে পেরে খুব ভালো লাগছে। পুরোনো দিনের বন্ধু সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা হলো। ভালো লেগেছে। ওর সঙ্গে ছবি করেছি।’উৎসবের মঞ্চে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও অমিতাভ বচ্চন। ছবি: ভাস্কর মুখার্জিউৎসবের মঞ্চে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও অমিতাভ বচ্চন। ছবি: ভাস্কর মুখার্জিপশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমরা এবার উৎসবের উদ্বোধনী ছবি করেছি মহানায়ক উত্তম কুমার ও তনুজা অভিনীত “অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি”।’ তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের শতবর্ষ উপলক্ষে কলাকুশলীদের কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে বলেন, ‘বাংলা ছবি নির্মাণে কলকাতা এখন অনেক এগিয়েছে। ২০১৯ সালে এই উৎসব ২৫ বছরে পা দেবে। ওই উৎসবে অমিতাভ বচ্চন, জয়া বচ্চন, শাহরুখ খানকে থাকতে হবে। তাঁদের ছাড়া কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের ২৫ বছর পূর্তি উৎসব হতে পারে না।’
‘জয় বাংলা, জয় সিনেমা’ বলে ভাষণ শেষ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এ বছর বাংলা চলচ্চিত্রের শতবর্ষকে ঘিরে এই উৎসবে পেয়েছে নতুন মাত্রা। এই উৎসবে দেখানো হবে ১৪টি কালজয়ী বাংলা ছবিও।
এবার উৎসবের ট্যাগ লাইন ‘কার্নিভ্যাল অব ওয়ার্ল্ড’। উৎসবে ৭০টি দেশের ১৭১টি পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি আর ১৫০টি স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবির প্রদর্শনী হবে। এসব ছবি দেখানো হবে কলকাতার ১৬টি প্রেক্ষাগৃহে। উৎসব চলবে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত। এবার উৎসবের ফোকাস কান্ট্রি অস্ট্রেলিয়া। বিশেষ ফোকাস কান্ট্রি তিউনিসিয়া। এ বছর অস্ট্রেলিয়া সিনেমারও শতবর্ষ। থাকছে অস্ট্রেলিয়ার একগুচ্ছ ছবি। আর বিশেষ ফোকাস বিভাগে থাকছে তিউনিসিয়ার ছয়টি ছবি।উৎসবের মঞ্চে শাহরুখ খান ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ভাস্কর মুখার্জিউৎসবের মঞ্চে শাহরুখ খান ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ভাস্কর মুখার্জিচলচ্চিত্র উৎসব কমিটির চেয়ারম্যান অভিনেতা প্রসেনজিৎ বলেন, ‘বাংলা ছবিকে বিশ্ব আঙিনায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য এ বছর উৎসবের মূল লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। উৎসবকে ঘিরে জলসাঘর বিভাগে এবার ১০০টি কালজয়ী বাংলা গানের প্রদর্শনী হবে।’
উদ্ধার করা পুরোনো ও বিখ্যাত চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী ১১ নভেম্বর উদ্বোধন করবেন জয়া বচ্চন। চলচ্চিত্রের জনক হীরালাল সেনের স্মরণে আগামী ১৩ নভেম্বর মধুসূদন মঞ্চে প্রদর্শিত হবে নাটক ‘হীরালাল বায়োস্কোপ’।
এবার উৎসবে সেরা বিদেশি ছবির পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হবে ৫১ লাখ রুপি আর শ্রেষ্ঠ পরিচালককে ২১ লাখ রুপি। সঙ্গে থাকবে রয়েল বেঙ্গল গোল্ডেন টাইগার ট্রফি। সেরা ভারতীয় ছবিকে দেওয়া হবে ‘হীরালাল সেন মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড’। শ্রেষ্ঠ নির্দেশককে দেওয়া হবে সাত লাখ রুপি আর শ্রেষ্ঠ ছবিকে দেওয়া হবে পাঁচ লাখ রুপি, সঙ্গে হীরালাল মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড। এ ছাড়া শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবিকে পাঁচ লাখ রুপি এবং শ্রেষ্ঠ তথ্যচিত্রকে দেওয়া হবে তিন লাখ রুপির নগদ পুরস্কার ও স্মারক। থাকছে এশিয়ার শ্রেষ্ঠ ছবির জন্য নেটপ্যাক পুরস্কার, স্মারক ও অর্থ।
এবার এই উৎসবে পালিত হচ্ছে ‘বাংলা সিনেমার শতবর্ষ’। তাই বাংলা সিনেমার জনক হিসেবে পরিচিত হীরালাল সেনের চলচ্চিত্রে অবদান ও তাঁর জীবনভিত্তিক ছবিটিও প্রদর্শিত হবে উৎসবে।
সাম্প্রতিক মন্তব্য