logo
news image

খাস্তগীর বিদ্যালয়ের ১১০ বছর

অগ্রগতি সংবাদঃ ষাটের দশকের তুখোড় ছাত্রনেত্রী দীপা দত্ত। উনসত্তরের গণ-আন্দোলনে ছিলেন মিছিলের সামনের সারিতে। কাছ থেকে দেখেছেন আসাদের মৃত্যু। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল দিনগুলোর সাক্ষী। বয়স বেড়েছে। কিন্তু স্মৃতি এখনো জাগ্রত। সেই স্মৃতি খুঁজতে প্রাণের টানে তিনি ঢাকা থেকে ছুটে যান তাঁর পুরোনো বিদ্যালয়ে। ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের এই প্রাক্তন শিক্ষার্থী যোগ দেন বিদ্যালয়টির পুনর্মিলনী উৎসবে।

বিদ্যালয়টির ১১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ১২ ও ১৩ জানুয়ারি স্কুল প্রাঙ্গণে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। উৎসবে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দীপা দত্তের মতো পুরোনো অনেক শিক্ষার্থী ছুটে যান প্রিয় স্কুল প্রাঙ্গণে। অতঃপর বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা দত্তদের উত্তরসূরিরা ফিরে যান সেই পুরোনো দিনে।

হ্যাঁ, এই বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী ছিলেন প্রীতিলতা ও কল্পনা দত্ত। এ ছাড়াও কত গুণীর পা পড়েছে এই বিদ্যাপীঠে। সাহিত্যিক মৈত্রেয়ী দেবী, ভাস্কর নভেরা আহমেদ, লেখিকা ফাহমিদা আমিন, রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী মায়া সেন, রাজনীতিক সাজেদা চৌধুরীসহ অনেকেই এই বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন।

সারা দেশে ছড়িয়ে রয়েছেন এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পড়েছে এই বিদ্যালয়ে। এই যেমন দীপা দত্ত ১৯৬২ সালে এই বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। তাঁর মাসি (খালা) প্রণতি দস্তিদারও এখানকার শিক্ষার্থী। প্রণতি দস্তিদারের মেয়ে মহুয়া দস্তিদার একই বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন ১৯৮৩ সালে।

দীপা দত্ত বলেন, ‘অনেক কিছুই বদলে গেছে, তবে স্কুল ভবনটি এখনো রয়ে গেছ। সেসব স্মৃতি খুঁজে ফিরছি। এই বিদ্যালয় নারীশিক্ষার জন্য অনন্য। ৫৫ বছর আগের সেই দিনগুলো খুব মনে পড়ছে আমার।’ বলতে বলতে দীপা দত্তের চোখের কোণে আবেগের জল। আক্ষেপও রয়েছে তাঁর, ‘প্রীতিলতা, কল্পনা দত্তের আবক্ষ মূর্তি কিংবা স্মৃতিচিহ্ন থাকতে পারত এ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। কিন্তু নেই।’

রোকেয়া খানম ১৯৫৭ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। তাঁরা তিন প্রজন্ম এখানে পড়েছেন। রোকেয়ার পাঁচ মেয়ে নাহিদা খানম (১৯৭৯), নাজমা বেগম (১৯৮৩), জাকেরা বেগম (১৯৮৪), সাঈতা বেগম (১৯৮৯) ও জাহিদা বেগম (১৯৯০) এই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। আবার জাকেরা বেগমের মেয়ে সামিহা নাওয়ার ২০১২ সালে একই বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন।

রোকেয়া খানম বলেন, ‘তখন নারীদের শিক্ষার বিষয়ে খুব বেশি আগ্রহ ছিল না। তবু আমরা পড়েছি। পরে আমার মেয়ে, নাতনিও এখানে পড়েছে। তারও আগে আমার খালা জোবেদা খাতুনও এখানে পড়েছেন। দীর্ঘদিন পর আবার বিদ্যালয়ে এসে কী যে ভালো লাগছে!’ একইভাবে দিল আফরোজ ও তাঁর দুই মেয়ে তাহমিনা পারভিন এবং আমেনা শাহিনও এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরাও অংশ নিয়েছে পুনর্মিলনী উৎসবে। ২০১৭ সালে এসএসসি পাস করা শাহনাজ সুলতানা, নাফিসা নওরোজ ও সাঈদা জাহান এসেছিল পুনর্মিলনী উৎসবে। নাফিসা বলল, ‘বিদ্যালয়ে যখন ছিলাম তখন বুঝিনি আসলে এটি কত প্রিয় জায়গা। এখন প্রতিমুহূর্তে বিদ্যালয়ের স্মৃতিগুলো মিস করি। বন্ধুদের সান্নিধ্যও খুব মনে পড়ে।’

১৯০৭ সালে দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনের পিতা যাত্রামোহন সেন তাঁর শ্বশুর ডা. অন্নদা চরণ খাস্তগীরের নামে এই অঞ্চলের প্রথম বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তবে তার আগে ১৮৭৮ সালেই ব্রাহ্ম সমাজের কর্তা চরণ অন্নদা খাস্তগীর চট্টগ্রামে বার্নাকুলার মাধ্যমিক স্কুল নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। পরে জামালখানের সাত একর জমি দান করে যাত্রামোহন সেন ওই স্কুলকেই ডা. খাস্তগীর স্কুল নামকরণ করেন। ১৯০৭ সালে মাত্র তিনজন ছাত্রী নিয়ে এই স্কুলটি তার যাত্রা শুরু করে।

পুনর্মিলনী উৎসবে অতিথি হিসেবে যোগ দেন অন্নদা চরণ খাস্তগীরের উত্তরসূরি চিকিৎসক গৌতম খাস্তগীর। তিনি বলেন, ‘এই বিদ্যালয় এই অঞ্চলে নারীশিক্ষায় অনন্য ভূমিকা রেখে আসছে। এই বিদ্যালয়ের জন্য আমরাও গর্বিত।’

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top