logo
news image

বাংলাদেশকে মাদক ও জঙ্গিবাদমুক্ত করতে হবে-প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা।  ।  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ থেকে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদক নির্মূলে সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)’র প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বৃহস্পতিবার (৮ নভেম্বর) পিলখানায় ‘বিজিবি দরবার’-এ নবপ্রতিষ্ঠিত বিজিবি রামু আঞ্চলিক সদর দপ্তরের পতাকা উন্মোচন এবং নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে নতুন দুই বিজিবি ব্যাটালিয়নের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আপনারা আন্তরিকতা ও সততার সঙ্গে কাজ করুন যাতে আমাদের দেশে মাদক প্রবেশ করতে না পারে এবং আমাদের দেশ মাদক পাচারের রুট না হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছেলেমেয়েদের মাদকাসক্তির কারণে অনেক পরিবার সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, তার সরকারের আরও চারটি বিজিবি সেক্টর, ১০ টি ব্যাটালিয়ন, ডগ ট্রেনিং অ্যান্ড ব্রিডিং ইউনিট এবং নতুন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, এই বাহিনীর সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি ও অপারেশনাল দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিজিবিতে একটি এয়ার উইং সৃষ্টি করা হয়েছে। এ জন্যে শিগগির দু’টি হেলিকপ্টার ক্রয় করা হচ্ছে।
বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. শাফীনুল ইসলাম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সিনিয়র সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
দরবারে বক্তব্যকালে প্রধানমন্ত্রী বিজিবি’র উন্নয়নে তার সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপতুলে ধরেন। তিনি সীমান্তে চোরাচালান বন্ধে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, শৃংখলা বাহিনী হিসেবে বিজিবি জনগণের আস্থা অর্জন করেছে। এছাড়া তিনি সীমান্ত অঞ্চলের প্রতি ৭৫ কিলোমিটারে বিজিবি’র একটি ব্যাটালিয়ন মোতায়েন এবং প্রতি ৫ কিলোমিটারে একটি বিওপি স্থাপনে তাঁর সরকারের পরিকল্পনার কথা জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নাফ নদীর কাছে এবং সুন্দরবন এলাকায় নদীতে টহলের জন্য দুটি নদী ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া চলছে। এজন্য ৪টি অত্যাধুনিক জাহাজ কেনা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সীমান্ত সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তাছাড়া, কক্সবাজার সীমান্তসহ প্রায় ৩২ কিলোমিটার এলাকায় আধুনিক প্রযুক্তি ও যানসহ সীমান্ত নজরদারি ও সাড়াদানের ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজিবি সদস্যদের গৃহায়ন সুবিধার উন্নয়নে ২৩৭টি বিওপি ভবন, ১৬ সৈনিক ব্যারাক, অফিসারদের জন্য ৬৩টি ফ্ল্যাট, জুনিয়র অফিসারদের জন্য ১১২টি ফ্ল্যাট, অন্যান্য পদের কর্মকর্তাদের জন্য ৩শ’ ফ্ল্যাট এবং ১৭টি জিওসি মেস নির্মাণ করা হয়েছে। গ্রীডলাইনের সঙ্গে সংযোগ নেই এমন ৩৩৩টি বিওপিতে সৌর প্যানেল বসানো হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার অফিসারদের জন্য পিলখানায় ৩৬টি ফ্ল্যাট নির্মাণের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তাছাড়া অন্যান্য বিজিবি সদস্যদের জন্য ৪৪৮টি ফ্ল্যাট, সীমান্তে ৬০টি নতুন বিওপি ভবন এবং তাদের নিরাপত্তার জন্য ৫৭৮টি বিওপিতে কাঁটাযুক্ত বেড়া নির্মাণ করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধে সীমান্ত নিরাপত্তা রক্ষী (ইপিআর) সদস্যদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির পিতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে তারা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। ইপিআর সদস্যরা বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার বার্তাটি ওয়ারলেসের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় পৌছে দিয়েছিল।
তিনি বলেন, প্রায় সাড়ে ১২ হাজার বাঙ্গালী সৈন্য মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। যুদ্ধে ৮ হাজার ২৭৪ জন সৈন্য শহীদ হন। তাদের মধ্যে দু’জন বীর শ্রেষ্ঠ যথাক্রমে শহীদ ল্যান্স নায়েক নুর মোহাম্মদ শেখ এবং শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সি আবদুর রউফ আমাদের গর্ব। তিনি বলেন, বিজিবির গৌরবগাঁথার ইতিহাসে আটজন বীর উত্তম, ৩২ জন বীর বিক্রম এবং ৭৭ জন বীর প্রতীক রয়েছেন।
শেখ হাসিনা তাঁর সরকার গঠনের মাত্র ১৯ দিনের মাথায় ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় সেনা বিদ্রোহের সময়ে শহীদ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, সরকার দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করে এবং বাহিনী সমপূর্ণ পুনর্গঠনের পরিকল্পনা করে। এই পুনর্গঠন পরিকল্পনার অংশ হিসাবে বিডিআর-এর পুনঃনামকরণ করা হয় বিজিবি এবং বিজিবি আইন-২০১০ প্রণয়নসহ বিজিবি’র উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই পরিকল্পনার অধীনে চারটি নতুন অঞ্চল, চারটি নতুন সেক্টর, ১৫টি ব্যাটালিয়ন এবং আইসিটি ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা পুনর্গঠিত করা হয়।
তিনি বলেন, নারায়নগঞ্জ ও গাজীপুরে বিজিবি ব্যাটালিয়ন সীমিত জনবল নিয়ে ইতোমধ্যেই তাদের কর্মকান্ড শুরু করেছে এবং সাভার ও আব্দুল্লাহপুরে (কেরানিগঞ্জ) ব্যাটালিয়ন গঠনের প্রক্রিয়া এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ইতোমধ্যেই বিজিবি’র জন্য আরো ১৫ হাজার জনবল এবং আরো চারটি সেক্টর, ১০টি ব্যাটালিয়ন, ডগ ট্রেনিং ও ব্রিডিং ইউনিট এবং নতুন প্রশিক্ষণ ইনিস্টিটিউটের অনুমোদন দিয়েছে। তিনি বিজিবি’র কল্যাণে তাঁর সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে বলেন, বিজিবি কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ ছাড়া সীমান্ত ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিজিবি’তে ৩৮৪ জন নারী সৈন্যসহ মোট ২৫ হাজার ৯০০ সৈন্য ও বেসামরিক জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ৩৪ হাজার ৪৫৫ জন সদস্য পদোন্নতি পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ে অধীনে অন্যান্য বাহিনীর সাথে বিজিবি’র সদস্যদের বেতন বৈষম্য সমন্বয় কর্মকান্ড চূড়ান্ত পযার্য়ে রয়েছে। সর্বনি¤œ স্তর থেকে সুবেদার মেজর পযর্ন্ত বিজিবি সদস্যরা সীমান্ত ভাতা পাচ্ছে এবং দুই মাসের অগ্রিম বেতনসহ বছরে দুই মাসের অর্জিত ছুটি মঞ্জুর করা হয়েছে। তাদের রেশন সুবিধাসহ অন্যান্য ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে বিজিবি সদস্যদের কঠোর পরিশ্রমের প্রশংসা করে বলেন, তাঁর সরকার বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের বিভিন্ন ইস্যু বিবেচনা করে গত বছরের জুলাই মাসে রামু আঞ্চলিক সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে গত বছরের আগস্ট মাসে রোহিঙ্গারা তাদের দেশ ছেড়ে পালিয়ে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় এসে আশ্রয় নেয়। বিজিবি সদস্যরা রোহিঙ্গা শিবিরে বায়োমেট্রিক রেজিষ্ট্রেশন কর্মসূচি এবং সাবির্ক ব্যবস্থাপনায় খুবই পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করছে।
প্রধানমন্ত্রী বিজিবি সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, দেশের সীমান্ত রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ ও মহান দায়িত্ব আপনাদের উপর ন্যস্ত। সীমান্তে কাজ করার সময়ে দেশপ্রেম ও সততার সবোর্চ্চ স্বাক্ষর রাখা আপনাদের পবিত্র দায়িত্ব।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top