এমপিভুক্তদের বৈশাখী ভাতা ও ইনক্রিমেন্ট ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা। ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য বৈশাখী ভাতা ও বার্ষিক পাঁচ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট ঘোষণা দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার (৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় গণভবনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন নয়টি সংস্থা ও ট্রাস্টের মধ্যে একশ’ কোটি টাকার চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেন।
প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণার ফলে এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষক ও কর্মচারী এ সুবিধা পাবেন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এই ইনক্রিমেন্টের জন্য বাড়তি প্রায় ৫৩২ কোটি টাকা লাগবে। আর বৈশাখী ভাতার জন্য লাগবে ১৭৭ কোটি টাকার বেশি।
তারা জানান, অর্থ বিভাগ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল বরাদ্দ দিয়েছে।
এদিকে শেখ হাসিনা বিভিন্ন ট্রাস্ট ফান্ড ও সংস্থার মাঝে একশ’ কোটি টাকার চেক হস্তান্তর করেন।
তিনি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ তহবিল ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী অবসর ভাতা বোর্ডকে ১০ কোটি টাকা করে অনুদান দেন। এছাড়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কল্যাণ ট্রাস্ট এবং সংস্কৃতিসেবী কল্যাণ তহবিলকে ২০ কোটি টাকা করে অনুদান দেন।
একই অনুষ্ঠানে তিনি বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ট্রাস্ট, বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ ট্রাস্ট, বঙ্গবন্ধু ক্রীড়াসেবী ফাউন্ডেশনকে ১০ কোটি টাকা করে অনুদান দেন।
এছাড়া নিউরো-ডেভেলপমেন্ট প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট এবং ইমাম ও মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্টকে প্রধানমন্ত্রী পাঁচ কোটি করে অনুদান দেন।
অন্যদের মধ্যে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন শিকদার, উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় এবং প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব নজিবুর রহমানম মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো: সোহরাব হোসাইন ও অবসর সুবিধাবোর্ডের সদস্য-সচিব অধ্যক্ষ শরীফ আহমদ সাদীসহ অন্যান্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সভাশেষে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো: সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘এইমাত্র মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষকদের মূল বেতনের ২০ শতাংশ বৈশাখী ভাতা ও ৫ শতাংশ বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বেসরকারি শিক্ষাখাতে এক বিপ্লব ঘটে গেলো।’
বৈশাখী ভাতা বকেয়া দেয়া হবে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘আগামী বৈশাখ থেকে শিক্ষক-কর্মচারীরা বৈশাখী ভাতা পাবেন। এ বাবদ একবছরে একশত সাতাত্তর কোটি সাতাশ লক্ষ উনপঞ্চাশ হাজার টাকা ব্যয় হবে। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে এ টাকা বরাদ্দ রেখেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এখন অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থছাড় দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে।’
তিনি বলেন, পাঁচ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধির জন্য বছরে ব্যয় হবে পাঁচশত একত্রিশ কোটি বিরাশি লাখ টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় এ টাকা বরাদ্দ রেখেছে।
শরীফ আহমদ সাদী বলেন, জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনার প্রতি পাঁচ লাখ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবেন। প্রধানমন্ত্রীকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা। তিনি আজ আমাদেরকে গণভবনে ডেকে বৈশাখী ভাতা, পাঁচ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট ও অবসর-কল্যাণের ফান্ডে অর্থ বরাদ্দসহ একগুচ্ছ সুসংবাদ দিয়েছেন। এই ঘোষণার কথা গত এপ্রিলেই আমাদেরকে জানানো হয়েছিলো। এবং শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র জাতীয় পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকম’র মাধ্যমে তা দেশের সব শিক্ষক-কর্মচারী জানতে পেরেছিলেন। শিক্ষকরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন এই দিনটির জন্য। আজ সেই শুভক্ষণ।
কোনো গোষ্ঠী বা সংগঠনের দাবি নয়, নিজে থেকেই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বৈশাখীভাতা চালু করেন শেখ হাসিনা। জাতীয় বেতনস্কেল ২০১৫ থেকে প্রতিবছর বৈশাখীভাতা পেয়ে আসছেন তারা। অনুদানভুক্ত বেসরকারি শিক্ষকদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী এই ঘোষণা দিলেন।
বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রাণের দাবি মেনে নেয়ায় বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মো: শাহজাহান আলম সাজু বলেন, গণভবন থেকে বেরিয়ে শিক্ষকরা আনন্দ মিছিল করেছেন। রোববার সারাদেশে আনন্দ মিছিল করবেন শিক্ষকরা।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো: কাওছার আলী ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবু জামিল মো: সেলিম প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। আরও অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বাশিস) মহাসচিব মো: নজরুল ইসলাম রনি, বাংলাদেশ শিক্ষক ইউনিয়নের সভাপতি মো: আবুল বাশার হাওলাদার, বাংলাদেশ মাদরাসা জেনারেল টিচার্স এসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. হারুন অর রশিদ ।
সাম্প্রতিক মন্তব্য