logo
news image

ভালোর সাথে আলোর পথে

মতিউর রহমান।  ।  
আজ ৪ নভেম্বর ২০১৮ সাল। আমাদের দৈনিক প্রথম আলো প্রকাশের ২০ বছর পূর্ণ হলো। আজ থেকে ঠিক ২০ বছর আগে, ১৯৯৮ সালের ৪ নভেম্বর সকালে দৈনিক প্রথম আলো প্রথম আলোর মুখ দেখেছিল।
সেদিন প্রথম আলো ছাপানোর প্রক্রিয়া দেখতে গভীর রাত পর্যন্ত আমরা ছাপাখানায় ছিলাম। আমার সহযোগীরা ছাড়াও সে রাতে ছাপাখানায় ছিলেন আমাদের লতিফুর রহমান, মাহ্ফুজ আনামসহ অনেকে।
আবার খুব সকালে সেই ছাপাখানায় গিয়ে পত্রিকার সরবরাহব্যবস্থায় সহযোগিতার পাশাপাশি বেশ কয়েকটি পত্রিকা নিয়ে বের হয়ে পড়েছিলাম। সেই সকালে নতুন কাগজের গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে গভীর আবেগে প্রথমেই হাজির হয়েছিলাম সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের বাসায়। নিজ হাতে প্রথম আলোর একটি কপি তাঁর হাতে তুলে দিয়েছিলাম গভীর ভালোবাসা নিয়ে। আমাদের প্রতি তাঁর ছিল গভীর আন্তরিকতা। কতভাবেই–না তাঁর সাহায্য আমরা পেয়েছি। মনে পড়ে, প্রথম দিনের সেই কাগজ আরও পৌঁছে দিয়েছিলাম তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হেনাসহ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে। তাঁদের হাতে কাগজটি তুলে দিতে গিয়ে চোখে পানি চলে এসেছিল। কেন? সেই সকালে আনন্দ আর বেদনায় মেশা এক গভীর অনুভূতি তৈরি হয়েছিল বলে!
শুধু তাঁরাই নন, এ রকম আরও অনেক শিল্পপতি, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা–কর্মীসহ অনেকের সমর্থন–সহযোগিতা পেয়েছিলাম আমরা। শুরুর সেই দিনগুলোতে তাঁদের কাছ থেকে যে সাহায্য ও সহযোগিতা পেয়েছিলাম, তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ থাকব সব সময়।
আমাদের অনেক বন্ধুর মধ্যে একজনের সেবাপ্রাপ্তির কথা আমাদের বলতেই হবে। তিনি হলেন শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী। প্রস্তুতি শুরুর দিন থেকে প্রথম আলোকে কতভাবে, কত রকম করে সুন্দর ও সাহসী করে তোলা যায়, তাঁর জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত সে কাজ তিনি কী গভীর ভালোবাসা নিয়ে, আন্তরিকতার সঙ্গে করে গেছেন। শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীকে এক দিনের জন্যও আমাদের পক্ষে ভুলে থাকা সম্ভব নয়।
শুধু ঢাকা শহর নয়, সারা দেশের সব শহর আর গ্রামের অনেক নতুন-পুরোনো রাজনীতিক, সাংস্কৃতিক ও সাংবাদিক কর্মী বন্ধুর অকুণ্ঠ সমর্থন আমরা পেয়েছিলাম। একইভাবে স্মরণ করি আমাদের এজেন্ট ও হকার বন্ধুদের কথাও। যাঁদের ছাড়া কাগজ চলতে পারে না।
আমাদের মনে পড়ে, প্রথম আলো প্রকাশের আগেই দেশের মানুষের মধ্যে একটা সাড়া পড়ে গিয়েছিল। আমরা ১০৪ জন তরুণ সাংবাদিক একটি সাহসী, মুক্ত ও স্বাধীন পত্রিকা প্রকাশের ঘোষণা দিয়ে প্রচারে নেমেছিলাম। অনেকের সহমর্মিতা–সহযোগিতা পেয়েছিলাম। স্বল্প সময়ের প্রস্তুতি নিয়ে, অনেক ভয় আর অজ্ঞতা নিয়ে আমরা প্রথম আলো প্রকাশ করেছিলাম। সেদিনের সেই আবেগ আর ভালোবাসার কথা ভাবলে আজ বিস্মিত হই।
সেদিন, ৪ নভেম্বর ১৯৯৮ সাল—বাংলাদেশের সংবাদপত্র জগতে আশ্চর্যজনক একটি ঘটনা ঘটেছিল! প্রথম দিনেই প্রথম আলো ছাপা হয়েছিল ১ লাখ ২২ হাজার কপি। আর এটাও ছিল এক বিস্ময়কর ঘটনা, সেদিন একটি কাগজও অবিক্রীত ছিল না। ওই দিনই আমরা বুঝে গিয়েছিলাম, দেশের সংবাদপত্র এক নতুন যুগে প্রবেশ করতে চলেছে।
সেই ৪ নভেম্বর ১৯৯৮ সালের পর থেকে প্রথম আলোকে আর কখনো পেছনে তাকাতে হয়নি। দৈনিক পত্রিকা হিসেবে প্রথম আলো শুধু সামনেই এগিয়েছে। প্রথম আলোর ছাপা সংখ্যা দ্রুত বেড়েছে। প্রথম দিনের ১ লাখ ২২ হাজার ছাপা সংখ্যা থেকে তিন বছরে ২ লাখ ছাড়িয়ে ৩ লাখে পৌঁছে গিয়েছিল। আমাদের পত্রিকার ছাপা সংখ্যা ৪ লাখ পেরিয়ে যায় ২০০৭ সালে। ২০১১ সালে ছাপা সংখ্যা ৫ লাখ ছাড়িয়ে যায়। এভাবেই প্রথম আলো মানুষের কাছে, পাঠকের কাছে আরও বেশি করে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে।
আসলে দৈনিক সংবাদপত্র কত ছাপা হলো, তার চেয়ে জরুরি বিষয় হলো, প্রতিদিন কতজন পাঠক পত্রিকা পাঠ করেন। বর্তমানে প্রথম আলো প্রতিদিন পাঠ করেন ৬৬ লাখ পাঠক। সম্প্রতি বহুজাতিক গবেষণা ও জরিপ প্রতিষ্ঠান কান্তার এমআরবি ২০১৮ সালের ন্যাশনাল মিডিয়া সার্ভে দেশব্যাপী জনমত জরিপ করে এ সংখ্যা প্রকাশ করেছে। এটা বাংলাদেশের জন্য এক নতুন রেকর্ড। অতীতে বাংলাদেশে কোনো কাগজের এত পাঠকসংখ্যা ছিল না। বিশ্বের ২০০টির অধিক দেশ থেকে অনলাইনে প্রথম আলো পাঠ করেন আরও ১০ লাখ পাঠক। বিশ্বের বাংলা ওয়েবসাইটগুলোর মধ্যে প্রথম আলোর পাঠকসংখ্যা সবচেয়ে বেশি। সে জন্যই আমরা বলি, বিশ্বের এক নম্বর বাংলা ওয়েবসাইট প্রথম আলো (prothomalo.com)।
আমরা মনে করি, একটি দৈনিক পত্রিকা শুধু পত্রিকা প্রকাশের মধ্যেই তাদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না। পাঠকসংখ্যাকে নানাভাবে বাড়িয়ে নিতে হয়, বাড়াতে নানা চেষ্টা করে যেতে হয়। সেই লক্ষ্য থেকে আমরা মাসিক কিশোর আলো (৫ বছর), মাসিক বিজ্ঞানচিন্তা (২ বছর), ইতিহাস-সমাজ-অর্থনীতি নিয়ে ত্রৈমাসিক প্রতিচিন্তা (৭ বছর) প্রকাশ করি। বর্ণিল (বৈশাখ, ঈদ, বিয়ে, খাবারদাবার ইত্যাদি) নামে ম্যাগাজিন বের হয় চার বছর ধরে। এ ছাড়া বিশিষ্ট লেখকদের বিশেষ লেখা নিয়ে আমরা প্রকাশ করি দেশের সেরা ঈদসংখ্যা (১৬ বছর)। এর বাইরেও আমাদের আছে প্রথমা প্রকাশন (১০ বছর)। প্রথমা প্রকাশন এ পর্যন্ত ৫০০ বই প্রকাশ করেছে সফলতার সঙ্গে। প্রথমা প্রকাশন ইতিমধ্যে দেশের অন্যতম সেরা প্রকাশনা সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।
প্রকাশনার বহু আগে, বাংলা ১৪১০ সন থেকে আমরা সৃজনশীল ও মননশীল শাখায় বর্ষসেরা বইকে পুরস্কার দিয়ে আসছি। পুরস্কার দিচ্ছি বছরের সেরা ক্রীড়াবিদদের। মেরিল–প্রথম আলো তারকা পুরস্কার এখন দেশের সবচেয়ে জমকালো ও গ্রহণযোগ্য সম্মাননা।
এভাবেই প্রথম আলো তার সংবাদিকতার নির্ধারিত কাজের পাশাপাশি সমাজকে এগিয়ে নিতে নানা প্রকাশনার কাজগুলো সফলভাবে করে যাচ্ছে। আমাদের এ ধরনের কাজ চলতে থাকবে, বহু বৈচিত্র্য নিয়ে অব্যাহত থাকবে। পাঠকবন্ধু আর শুভানুধ্যায়ীরা আমাদের সঙ্গে আছেন বলেই এ কাজগুলো আমরা করতে পারছি।
তবে আমাদের এসব বহুমুখী কাজের মূল লক্ষ্য হলো, বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে যে অমিত সম্ভাবনা ও শক্তি আছে, তাকে জাগ্রত করা, তাদের চলার পথকে সহজ করে দেওয়া।
আমরা সব সময় বলি এবং বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। আমরা দেশের সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জয় দেখতে চাই।
বাংলাদেশের জয় দেখার জন্য প্রথম আলো সবচেয়ে বেশি নজর দিয়ে থাকে দেশের কিশোর ও তরুণ শিক্ষার্থীদের ওপর। আমরা জানি, তারা লেখাপড়া শেষে বিদ্যা-বুদ্ধি ও সাহস নিয়ে নতুন উদ্যমে এগিয়ে গেলেই বাংলাদেশের আরও বড় বড় জয় আসবে। সে জন্য প্রথম আলো প্রতিষ্ঠার ২০ বছর ধরেই গণিত অলিম্পিয়াড (১৬ বছর), ভাষা প্রতিযোগ (১৪ বছর), ফিজিকস অলিম্পিয়াড (২ বছর), বর্ণমেলা (৯ বছর), তারুণ্যের জয়োৎসব, জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা, কোডিং ও প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা ইত্যাদি করে চলেছি। এসব প্রতিযোগিতায় গ্রাম আর শহরের হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী অংশ নেয় তাদের অভিভাবক নিয়ে। এসব অনুষ্ঠানের দিনগুলোতে একেক দিন কী আশ্চর্য ও অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয়! দেশের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী, শিক্ষক, লেখক, শিল্পী ও বিশিষ্টজনেরা তাদের সঙ্গে মিলিত হন, তাদের নানাভাবে উৎসাহিত করেন। এসবের মধ্য থেকেই আমরা দেখতে পাই, যে নতুন প্রজন্ম গড়ে উঠছে, তারা বাংলাদেশের জন্য আরও নতুন নতুন জয় নিয়ে আসবে। আরও অনেক বিষয়ে বহু অনুষ্ঠান করে থাকে প্রথম আলো।
বাংলাদেশের কিশোর আর তরুণদের জন্য কাজ করার পাশাপাশি বাংলাদেশের নারীদের পাশে থাকি। দেশে মেয়েদের ওপর একসময় ভয়াবহ অ্যাসিড সন্ত্রাস ছিল নিয়মিত ঘটনা। প্রথম আলো আজ গর্ব করে বলতে পারে, অ্যাসিড সন্ত্রাস আজ বহুলাংশে কমে গেছে। এর পেছনে রয়েছে প্রথম আলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ২০০০ সাল থেকে প্রথম আলোর কর্মীদের এক দিনের বেতন দিয়ে অ্যাসিড সন্ত্রাসবিরোধী এই কাজ শুরু হয়েছিল। একইভাবে মাদকাসক্তি থেকে কিশোর-তরুণদের মুক্ত রাখার অবিরাম চেষ্টা করে যাচ্ছি আমরা। পাশাপাশি আর্থিক সহায়তা ও বৃত্তি দিয়ে অতিদরিদ্র শত শত শিক্ষার্থীকে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করছে প্রথম আলো। তাঁদের মধ্যে অনেকে বিদেশেও গেছেন উচ্চতর শিক্ষা নিতে। একই সঙ্গে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার শিকার নিহত-আহত পোশাককর্মীদের ২০ জন শিশু–সন্তানকে শিক্ষাদানের জন্য সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি আমরা। দেশের দুর্গম ও দরিদ্র পাঁচটি অঞ্চলে পাঁচটি আলোর স্কুল পরিচালনা করছি। আমাদের এ ধরনের মানবিক ও সামাজিক কাজগুলো পরিচালিত হচ্ছে প্রথম আলো ট্রাস্টের মাধ্যমে।
প্রথম আলো প্রতিদিন সংবাদ প্রকাশের পাশাপাশি কিশোর–তরুণ আর নানাভাবে দুর্গত মানুষের পাশে রয়েছে। এ জন্য আমরা বলে থাকি প্রথম আলো সংবাদপত্রের চেয়ে একটু বেশি।
দুই
গত কয়েক দশকে, বিশেষ করে গত দুই দশকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে অনেকটা স্বাবলম্বী হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরীণ অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন হয়েছে। মাথাপিছু আয় ও গড় আয়ু বেড়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক খাতে ও নারীর ক্ষমতায়নে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। আমরা সারা বিশ্বে সম্মান-স্বীকৃতি পাচ্ছি। ক্রিকেটের বিজয়-সাফল্য আমাদের অনুপ্রাণিত করছে। কিশোর–তরুণ ছেলেমেয়েদের ফুটবলে বড় বড় অর্জন পাচ্ছি।
আমাদের রয়েছে বিশাল বড় এক সম্ভাবনাময় তরুণ সমাজ। নানা ক্ষেত্রে দেশে–বিদেশে এই তরুণেরা প্রতিভা আর সম্ভাবনার স্বাক্ষর রেখে চলেছে। এরাই আমাদের প্রকৃত ভবিষ্যৎ। তরুণদের যেন পথবিভ্রাট না ঘটে, তারা যেন আলোকিত ভবিষ্যতে পৌঁছাতে পারে, সে ব্যাপারে আমাদের দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে। সে জন্য আমাদের সব ভাবনা, সব কার্যক্রম তাদের নিয়ে, তাদের জন্য।
প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আমরা সব সময় বলি, বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। এ যাত্রা অব্যাহত থাকবে, সেই প্রত্যাশা আমরা করি। আমাদের সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের কর্তব্য এই অগ্রযাত্রাকে আরও বেগবান করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। সে জন্যই আমরা বারবার বলি, আমরা বাংলাদেশের জয় দেখতে চাই।
আমরা জানি, বাংলাদেশের সামনে যেমন অনেক সম্ভাবনা, একই সঙ্গে রয়েছে কিছু সমস্যাও। সে জন্য সামনের দশকটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছাতে হলে বাংলাদেশের জন্য জরুরি প্রয়োজন একটি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা, সুপ্রতিষ্ঠিত শক্তিশালী নির্বাচনব্যবস্থা, সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন, ব্যক্তিস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা। এসব বিষয়ে গোটা জাতি যাতে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে, সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ বিষয়ে সরকারের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। বিরোধী দলগুলোরও রয়েছে অনেক দায়িত্ব। দায়িত্ব রয়েছে দেশের নাগরিক সমাজের, বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশাজীবীরও। সেখানে অবশ্যই সংবাদপত্র ও প্রচারমাধ্যমকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে।
তবে প্রকৃত গণতন্ত্র, সুশাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশের প্রশ্নে আমাদের বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। আর, সংবাদপত্র বা প্রচারমাধ্যমকে চাপের মধ্যে চলতে হয়, ভয়ের মধ্যে থাকতে হয়। সংবাদপত্রের প্রধান আয়ের উৎস বিজ্ঞাপন নিয়ে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এসব সমস্যার মধ্য দিয়ে এখনো আমাদের চলতে হচ্ছে। অথচ স্বাধীন সংবাদপত্র ও প্রচারমাধ্যম ছাড়া কখনোই প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। একটি সমাজে সংবাদপত্র কতটা স্বাধীনতা ভোগ করে, সেটিই সেই সমাজের গণতন্ত্রের প্রধান পরিমাপক। সবশেষে আমরা আবার পরিষ্কার বলতে চাই, সব বাধাবিপত্তি বা চাপ সত্ত্বেও প্রথম আলো তার মূল আদর্শ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, অসাম্প্রদায়িকতা ও আপসহীনতা অব্যাহত রাখবে। আমরা মুক্ত ও স্বাধীন সাংবাদিকতা করতে চাই। আর, আমরা সব সময় মনে করি, পাঠকের কাছেই আমাদের জবাবদিহি থাকতে হবে।
প্রথম আলোয় আমরা দেশের মানুষের অনেক বিজয়ের গল্প, সাফল্যগাথা লিখতে চাই। একইভাবে রাষ্ট্রের সফলতার কথা, মানুষের নতুন নতুন উদ্যোগের কথা, প্রতিষ্ঠানের সফলতার কথা প্রতিনিয়ত মানুষকে জানাতে চাই। এসবের মাধ্যমেই আমরা আরও এগিয়ে যেতে চাই ভালোর সাথে, আলোর পথে।
প্রথম আলো ট্রাস্টের কিছু কার্যক্রম
অ্যাসিডদগ্ধ নারীদের জন্য সহায়ক তহবিল
২০০০ সালের ১৯ এপ্রিল অ্যাসিডদগ্ধ নারীদের জন্য প্রথম আলো সহায়ক তহবিলের কার্যক্রম শুরু হয়। এ পর্যন্ত ৩০২ জন নারীকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
প্রথম আলো ট্রাস্ট মাদকবিরোধী আন্দোলন
২০০৩ সালের ১ এপ্রিল প্রথম আলো ট্রাস্ট মাদকবিরোধী আন্দোলন কার্যক্রম শুরু হয়।
ত্রাণ তহবিল
১৯৯৯ সাল থেকেই যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে দুর্গতদের পাশে দাঁড়ায় প্রথম আলো ট্রাস্ট ত্রাণ তহবিল।
আলোর পাঠশালা
আলোর পাঠশালা নামে ৫টি স্কুল পরিচালনা করা হচ্ছে। মোট শিক্ষার্থী ৭২৫ জন।
অদম্য মেধাবী
২০০৭ সালে অদম্য মেধাবীদের বৃত্তি দেওয়া শুরু হয়। এই তহবিলে ইতিমধ্যে ৮৪০ জন শিক্ষার্থী সহায়তা পেয়েছে।
মেরিল-প্রথম আলো সাভার সহায়তা তহবিল
২০১৩ সালের ২৬ এপ্রিলে সাভার সহায়তা তহবিল গঠিত হয়। ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক ও পুনর্বাসন সহায়তার পাশাপাশি নিহত পরিবারের ২০ জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে।
প্রথম আলো ট্রাস্ট–সাদত স্মৃতি পল্লী
নরসিংদীর রায়পুরায় ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে প্রথম আলো ট্রাস্ট–সাদত স্মৃতি পল্লী কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম আলো ট্রাস্ট-সাদত স্মৃতি পল্লীতে বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ বিতরণ করা হয়।

* মতিউর রহমান: সম্পাদক, প্রথম আলো। 

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top