logo
news image

ভাসমান ট্রেন আবিষ্কারক বাংলাদেশি আতাউল করিম

প্রাপ্তি প্রসঙ্গ ডেস্ক।  ।  
যোগাযোগ ব্যবস্থার উৎকর্ষতায় ট্রেনের অবদান অনস্বীকার্য। আঁকাবাঁকা লাইন ধরে ঘন বনাঞ্চল হয়ে ব্যস্ত নগরীর বুকের উপর দিয়ে ট্রেন এগিয়ে যায় বাধাহীন। এই ট্রেনের কথা আসতেই মানসপটে চলে আসে লোহালক্কর, রেললাইন, বগি ইত্যাদি বিষয়গুলো। কিন্তু কেউ কি কখনো কল্পনা করেছেন যে একটি ট্রেন চলবে অথচ ট্রেনের চাকা রেললাইন ছোঁবে না! আর কেউ ভাবুক বা না ভাবুক এই বিষয়টি নিয়ে ভেবেছেন বাংলাদেশি তথা সিলেট বড়লেখার এক বিজ্ঞানী, আতাউল করিম। আর ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে ঠিক কী করতে হবে তার রূপরেখাও তিনি দেখিয়েছেন। বিশ্বের সেরা ১০০ বিজ্ঞানীর মধ্যে তিনি একজন।
ট্রেন চলার এই প্রচলিত ধারণার স্থানে এবার যোগ হয়েছে আতাউল করিমের দেয়া নতুন ধারণা। এই ট্রেনের গঠনশৈলী খুবই আকর্ষণীয়। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, এটা চলার সময় ভূমি স্পর্শ করবে না। ট্রেনটি চুম্বক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সাবলীলভাবে চলবে। এর গতিও অনেক বেশি হবে। অনেকটা বুলেট ট্রেনের মতো। জার্মানি, চীন ও জাপানে ১৫০ মাইলের বেশি গতির ট্রেন আবিষ্কৃত হয়েছে। তবে ওই ট্রেনগুলোতে প্রতি মাইল ট্রাক বা লাইনের জন্য গড়ে খরচ পড়ে ১১ কোটি ডলার। আর সেই জায়গায় আতাউল করিমের আবিষ্কৃত এ ট্রেনে খরচ হবে মাত্র ১ কোটি ২০ লাখ থেকে ৩০ লাখ ডলার।
বাংলাদেশি এই বিজ্ঞানী এখন আমেরিকার ওয়াশিংটন ডিসি সংলগ্ন ভার্জিনিয়ার নরফোকে অবস্থিত ওল্ড ডোমিনিয়ন ইউনিভার্সিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট (গবেষণা) হিসেবে কর্মরত। ডঃ করিমের এ সাফল্যের কাহিনি মার্কিন মিডিয়াতেও ফলাও করে প্রকাশিত হয়। গবেষকেরা বিগত ৭ বছর ধরে এ ধরণের একটি ট্রেন তৈরির গবেষণায় ফেডারেল প্রশাসনের বিপুল অর্থ ব্যয় করেন। কিন্তু তা সাফল্যের আশপাশেও যেতে পারেনি। অবশেষে ২০০৪ সালে এই গবেষণা প্রকল্পের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন ড. আতাউল। এই প্রকল্পটির দায়িত্ব ড. করিমের হাতে আসার মাত্র দেড় বছরের মাথায় ট্রেনটির প্রোটোটাইপ তৈরি করতে সক্ষম হন তিনি। পৃথিবীর নামকরা বিজ্ঞানীরা ট্রেনটিকে বারংবার পরীক্ষা করে দেখেছেন। শেষমেষ সবাই সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন যে, এখন এই ট্রেনটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা সম্ভব।
আতাউল করিম বাংলাদেশি-মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার নরফোকে অবস্থিত ওল্ড ডোমিনিয়ান ইউনিভার্সিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট (গবেষণা) হিসেবে কর্মরত এই বিজ্ঞানী ইলেকট্রো-অপটিক্সের গবেষণায় অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে গণ্য।
আতাউল করিমের জন্ম বড়লেখা পৌর শহরের বারইগ্রাম গ্রামে। বাবা মোহাম্মদ আবদুস শুকুর পেশায় ডাক্তার ছিলেন। তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় বড়লেখার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর বড়লেখার ঐতিহ্যবাহী পিসি হাইস্কুলে পড়ালেখা করেন। পরবর্তী সময়ে ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ থেকে ১৯৬৯ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় চট্টগ্রাম বোর্ডে প্রথম শ্রেণীতে ৪র্থ স্থান অধিকার করেন। ১৯৭২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সিলেট এম সি কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৬ সালে পদার্থবিজ্ঞানে বিএসসি (অনার্স) ডিগ্রি লাভের পর উচ্চ শিক্ষা লাভের উদ্দেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গমন করেন। পদার্থবিজ্ঞানে মাস্টার অব সায়েন্স, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার অব সায়েন্স এবং পিএইচডি করেন ইউনিভার্সিটি অব আলাবামা থেকে যথাক্রমে ১৯৭৮, ১৯৭৯ এবং ১৯৮১ সালে।
২০০০ সালে তিনি সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কে তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৌশলের ডিন হিসেবেও কর্মরত ছিলেন। ২০০৪ সালে তিনি নরফোকে অবস্থিত ওল্ড ডোমিনিয়ান ইউনিভার্সিটির তড়িৎ ও কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন এবং বর্তমানে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট (গবেষণা) হিসেবে কর্মরত। তিনি ১৮টি বই লিখেছেন। এছাড়া আরো ৭টি বইয়ে তিনি ‘পরিচ্ছেদ’ লিখেছেন। তাঁর বৈজ্ঞানিক নিবন্ধের সংখ্যা ৩৭৫-এরও বেশি। তাঁর নিবন্ধগুলো পৃথিবীর খ্যাতনামা জার্নালসমূহে প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর রচিত ও সম্পাদিত বইগুলো বিভিন্ন দেশে পাঠ্যপুস্তক হিসেবে পড়ানো হয়। তাঁর বইগুলোর মধ্যে Digital Design: A Pragmatic Approach (১৯৮৭), Electro-Optical Devices and Systems (১৯৯০), Optical Computing: An Introduction (১৯৯২), Electro-Optical Displays (১৯৯২), Continuous Signals and Systems with Matlab (২০০১, ২০০৯), and Digital Design: Basic Concepts and Principles (২০০৮) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ড. আতাউল করিম ১৯৭৭ সালে সহপাঠী সেতারাকে বিয়ে করেন। সেতারা একজন প্রাণরসায়নবিদ। তাঁরা এক পুত্র ও দুই কন্যার জনক-জননী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে ৩০ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানো আতাউল করিম মেধা ও যোগ্যতার বলে বর্তমানে বিশ্বের মেধাসম্পন্ন ৫ হাজার গবেষক-ছাত্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অন্তত ৬০০টি অনুষদে। ড. করিমের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে ৬টি কলেজ, কমপক্ষে ২০টি গবেষণাকেন্দ্র, ৬শত শিক্ষক এবং ৫ হাজারের বেশি গ্র্যাজুয়েট ও আন্ডার-গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top