logo
news image

আওয়ামী লীগের ভরসা পলক-ঘর সামলাতে ব্যস্ত বিএনপি

রাজু আহমেদ, সিংড়া (নাটোর)।  ।  
নাটোর-৩ সিংড়া সংসদীয় আসন। চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের বৃহৎ  উপজেলা এটি। ১২টি উইনিয়ন ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত সিংড়া উপজেলা। জনসংখ্যা প্রায় ৫ লাখ । ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৭৬ হাজার ৫৯।  নারী ভোটার ১ লক্ষ ৩৮ হাজার ২০৬, পুরুষ ভোটার ১ লক্ষ ৩৭ হাজার ৮৫৩ । ইতিমধ্যে এ আসনে নির্বাচনী আমেজ বইতে শুরু করেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভব্য প্রার্থীরা যোগ দিচ্ছেন সভা-সমাবেশ ও সামাজিক কর্মকান্ডে। কেউ কেউ মটর সাইকেল শোভাযাত্রা ও গণসংযোগ করে যাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী সকল প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছে, ইতোমধ্য ওয়ার্ড ও গ্রাম ভিত্তিক কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শেষের দিকে বলে জানা গেছে। তবে বিএনপি নিজেদের ঘর সামাল দিতে ব্যস্ত। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ ও  সাবেক মেয়র শামিম আল রাজির মূত্যুতে অভিভাবক শূন্য বিএনপি। এ অবস্থায় কোন্দলে জর্জড়িত বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ করা নিয়ে শংকিত কর্মীরা। এ অবস্থায় নিজেদের আগুনে পুড়ছে তারা। সাবেক এমপি কাজী গোলাম মোর্শেদের অনুপস্থিতিতে তার প্রতি ও আস্থা নেই কর্মীদের। সম্প্রতি পৌর বিএনপির সভাপতি দাউদার মাহমুদকে উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক করে পৌর কমিটি বাতিল করেছে জেলা বিএনপি। এতে করে নতুন করে আলাদা বলয় ও মেরুকরন শুরু হয়েছে সিংড়া বিএনপিতে।
এ আসনটি দীর্ঘ ৩৭ বছর আওয়ামী লীগের বেদখলে ছিলো। ১৯৭৩ সালের পর প্রথম বারের মতো নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জুনাইদ আহমেদ পলক বিপুল ভোটে বিজয়ের মাধ্যমে আসনটি বিএনপি জোটের হাত ছাড়া হয়। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ও তিনি বিপূল ভোটে বিজয়ী হন। এ আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী তিনিই। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী ইতোমধ্য তার পক্ষে পোষ্টার, ব্যানার, প্রচার প্রচারনায় সরগরম করে তুলেছেন। মূলত পলকেই ভরসা আওয়ামী লীগের হলেও  আসনটি পুনরুদ্ধার করতে চায় বিএনপি জোট। এ আসনে ১৯৯১ সালে জামায়াত, ১৯৯৬ সালে বিএনপি, ২০০১ সালে পুনরায় বিএনপি জয়ী হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এলাকার সন্তান হিসেবে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন সাবেক ভিপি এবং তৎকালিন সময়ের উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি নবম সংসদের সর্বকনিষ্ঠ সাংসদ নির্বাচিত হোন । সংসদ সদস্য হয়ে তিনি এলাকার ব্যাপক উন্নয়নমুলক কাজ করে যাচ্ছেন। তরুন রাজনীতিবিদ হিসেবে সারাদেশের পরিচিত মুখ। সিংড়ার উন্নয়নে ও নজর কেড়েছেন। ২০১৩ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সিংড়া উপজেলার প্রথম মন্ত্রী হিসেবে নিজের নাম লেখান। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী হয়ে তিনি এলাকায় ব্যপক উন্নয়নমূলক কাজ করেন। মন্ত্রী হওয়ার পরেও প্রতিনিয়ত এলাকায় এসে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন জুনাইদ আহমেদ পলক। প্রতি সপ্তাহে তিনি এলাকায় এসে সাধারন জনগনের সাথে নিজ বাড়িতে সাক্ষাত করেন এবং বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করেন। এছাড়া নেতাকর্মীও সাথে যোগাযোগসহ সভা, সমাবেশ করে যাচ্ছেন। আগামীতে তার বিকল্প আর কেউ নেই বলে মনে করছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ।
উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এডভোকেট ওহিদুর রহমান শেখ জানান, ৩৭ বছরের তুলনায় বিগত ১০ বছরে সিংড়ায় সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়েছে। বিশেষ করে ২০০ কিলোমিটার পাকা সড়ক নির্মান, শতাধিক ব্রীজ,কালভার্ট নির্মান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন, ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে সিংড়া- তাড়াশ বারুহাস রাস্তা, ২ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সিংড়া বাসস্ট্যান্ডে ফুটওভার ব্রীজ নির্মান, ডায়াবেটিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, কেন্দ্রীয় মসজিদ নির্মান, এছাড়া শতাধিক স্কুল-কলেজের ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়নমুলক কাজ করেছেন। প্রায় ৩শ কোটি টাকা ব্যয়ে চলনবিল ডিজিটাল সিটি নির্মান কাজ চলমান রয়েছে। যেখানে হাইটেক পার্ক, টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার, টিটিসি সেন্টার ও শেখ কামাল ইনকিউবেশন সেন্টার নির্মিত হবে। তাছাড়া দলকে সুসংগঠিত করতে গত ৫ বছরে উপজেলা আওয়ামীলীগের ৪৮ টি সভা সম্পন্ন করেছেন বলে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, বিগত সকল সময়ের চেয়ে
আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ, ছোটখাট অভিমান থাকতে পারে তবে তা সাময়িক। তৃনমূল নেতাকর্মী এবং জনগন তাকে আবারো সংসদ সদস্য নির্বাচিত করে উন্নয়নের ধানা বজায় রাখবেন । এখানে নৌকার যোগ্য প্রার্থী হিসেবে পলকের বিকল্প নাই বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বর্তমান সংসদ সদস্য এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, সিংড়ায় আওয়ামী লীগ  নবীন-প্রবীনের সমন্বয়ে দলের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সকলের ঐক্যবদ্ধ কার্যক্রমে বিএনপি-জামায়াতের এই দূর্গটিকে তছনছ করে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি বানানো হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামী নির্বাচনে দলের নেতা কর্মী নৌকা প্রতীকের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ। তাছাড়া নিরাপদ, শান্তি ও উন্নয়নের সিংড়া গড়তে জনগনের সাথে আগামীতে ও কাজ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন তিনি।
এ আসনে বিএনপির প্রার্থী তালিকায় শোনা যাচ্ছে  প্রায় ৮জন সম্ভব্য প্রার্থীর নাম। নির্বাচনে সবাই দলীয় মনোনয়নে আশাবাদী।
এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বাদে তিনবার এই আসন থেকে বিজয়ী হওয়া বর্তমান জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি, জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদ।  বিনয়ী, ভদ্র মানুষ হিসেবে পরিচিত কাজী গোলাম মোর্শেদ। তার বাবা মরহুম কাজী আবুল মসউদ অবিভক্ত বাংলা এবং পাকিস্তান আমলে এমএলএ এবং পার্লামেন্ট সেক্রেটারি ছিলেন তিনি।
সিংড়া উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি, উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর বিএনপির সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দাউদার মাহমুদ। তিনি উপজেলা ২০দলীয় জোটের সদস্য সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।  এলাকায় শুভেচ্ছা পোষ্টার  ব্যানার এবং গণসংযোগের মাধ্যমে নিজেকে যোগ্য প্রার্থী হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন।
এ ছাড়াও বিএনপি থেকে এ আসনে মনোনয়ন  চাইবেন, রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলের সাবেক কার্যনির্বাহী সদস্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ছাত্রদল শাখার সাবেক সভাপতি, ডক্টরস এ্যাসোসিয়েসন অফ বাংলাদেশ (ড্যাব)-এর সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক, ধানের শীষ কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ এর সিনিয়র সহ-সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ডাঃ নজরুল ইসলাম। তিনি এলাকায় প্রতিনিয়ত ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প ছাড়াও রোগীদের বিনামূল্য চিকিৎসা সেবা দেন। তিনি ২০০১ সাল থেকে মনোয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। এবার ও তিনি আশাবাদী।
জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম দলের কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ সুপ্রিমকোট  এর আইনজীবী মোঃ ইউসুফ আলী। তিনি আন্তর্জাতিক সালিশ বিশেষজ্ঞ এবং উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন।  তিনি ও কর্মী সমর্থকদের সাথে যোগাযোগ ও গনসংযোগ করে যাচ্ছেন।
সিংড়া পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সিংড়া দমদমা পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম আনু। তিনি ও এলাকায় প্রচার প্রচারনা ও নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করে চলছেন।
ক্লিন ইমেজের প্রার্থী হিসেবে তিনি নিজেকে দাবি করেন।
বিএনপি থেকে আরো মনোনয়ন চাইতে পারেন, সিংড়া উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শামীম হোসেন। তিনি ২০০৩ সালে কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি ও কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন।  সিংড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি দীর্ঘদিনের কান্ডারী এ্যাডঃ মজিবর রহমান মন্টু।  জেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহীন। প্রার্থী হিসেবে জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক বেলাল-উজ-জামানের নাম ও শোনা যাচ্ছে । এছাড়া মনোনয়ন চাইবেন উপজেলা জাতীয় পার্টি আহবায়ক প্রকৌশলী আনিসুর রহমান ও সদস্য সচিব আব্দুস সালাম। ওয়ার্কাস পার্টির মনোনয়ন চাইবেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান। বিকল্পধারা বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে মনোনয়ন চাইবেন, নাটোর এন এস কলেজের সাবেক ভিপি মোঃ রকিব উদ্দিন ও সিংড়া উপজেলা কমিটির আহবায়ক সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন আলীরাজ। ইসলামী আন্দোলনের উপজেলা শাখার সেক্রেটারী শাহ্ মোস্তফা ওয়ালিউল্লাহ সেলিম ও মনোনয়নের তালিকায় রয়েছেন।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top