logo
news image

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও আমাদের শিশুরা

তৌহিদ চৌধুরী।  ।  
ইদানিংকালে শিশু-কিশোর বিশেষ করে আঠারো বয়সের নীচের ছেলে-মেয়েদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা সোস্যাল মিডিয়ার দিকে বেশী ঝুঁকে পড়ায় অভিভাবকরা উদ্বেগের মধ্যে সময় অতিবাহিত করেন। উদ্বেগের যথেষ্ট কারনও রয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- পড়াশুনায় অমনোযোগী হওয়া, বিভিনড়ব রকম গেইমও আসক্ত হয়ে পড়া, অপরাধে জড়িয়ে পড়া, সর্বোপরি শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া। ২০১৮ সালের মার্চ মাসের গ্লোবাল সোস্যাল মিডিয়া রিসার্চ সাময়িকীর তথ্য অনুযায়ী বর্তমান পৃথিবীর ৪.১ বিলিয়ন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর মধ্যে ৩.১ বিলিয়নই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাথে সংযুক্ত। এরমধ্যে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা সর্বোচ্চ এবং এর পরেই রয়েছে ইউটিউব ব্যবহারকারী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যে সবসময় ক্ষতির কারণ তা কিন্তু ঠিক নয়। অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন ইউটিউবের মাধ্যমে আনেক তথ্য জানতে পারা যায় যা বিশেষ করে টিনএজারদের পড়াশুনার ক্ষেত্রে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। বিপত্তি তখনই দেখা দেয় যখন বাচ্চারা অনিয়ন্ত্রিতভাবে সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমকে ব্যবহার করে। সম্প্রতি ডেইলি টেলিগ্রাফকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্রিটেনের প্রাইভেট স্কুল শিক্ষকদের সংগঠনের নেতা যিনি একজন প্রধান শিক্ষক শেন ফেনটন বলেছেন, সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার আমাদের শিশুদের মানসিক সমস্যার কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি এসব সমস্যার সমাধান ও উত্তরনে অভিভাবক এবং সেই সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কর্তা ব্যক্তিদের দায়িত্বের কথা স্মরন করিয়ে দিয়েছেন। আমাদের শিশুদেরকে সোস্যাল মিডিয়ার খারাপ দিক হতে রক্ষা করতে অথবা সরিয়ে আনতে হলে সবচেয়ে বড় ভুমিকা রাখতে পারেন অভিভাবকরা। প্রথমত: একজন সচেতন অভিভাবককে খেয়াল রাখতে হবে যে তার সন্তানের বয়স হয়েছে কিনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করার- যদি না হয়ে
থাকে তাহলে তাকে সেটা ব্যবহার করতে না দেয়া। দ্বিতীয়ত: একান্ত প্রয়োজন না হলে সেসব ডিভাইস কিনে না দেয়া, যেগুলো অভিভাবকরা ব্যবহার করতে পারেন না। তৃতীয়ত: একান্তই যদি কিনে দিতে হয় তবে তা ব্যবহার করার জন্য সময় বেঁধে দেয়া। কি কারনে এবং কোন ওয়েব সাইটে বাচ্চারা ঢুকছে তা মনিটর করা। যদি অভিভাবকদের সে সম্বন্ধে স্পস্ট ধারনা না থাকে তাহলে যদি কোন প্রাপ্ত বয়স্ক আত্মীয়-স্বজন থাকেন তাদের সহায়তা নেয়া এবং প্রয়োজনবোধে স্কুলের শিক্ষকের সহায়তা নেয়া। চতুর্থত: বাড়ীতে বাচ্চাদের প্রয়োজনে ডেক্সটপ বা ল্যাপটপ রাখা এবং বাচ্চদের তাদের প্রয়োজনে ডেস্কটপ ব্যবহার করতে উৎসাহিত করা যাতে করে মনিটরিং সহজ হয়। পঞ্চমত: বাচ্চাদের বেডরুমে কোন ডিভাইস ব্যবহার করতে না দেয়া এবং যদি করতে হয় তাহলে তাদের বেডরুমের দরজা বন্দ করতে না দেয়া। ষষ্ঠত: বাচ্চাদের সন্দেহের চোখে না দেখে তাদেরকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের খারাপ দিকগুলো ব্যাখ্যা করা অত্যন্ত জরুরী, তবে ভাল দিকগুলোও বলতে হবে। সপ্তমত: স্কুলের বাচ্চদের যদি প্রয়োজনে মোবাইল কিনে দিতে হয়, তাহলে স্মার্টফোন কিনে না দিয়ে অতি সাধারণ একটি ফোন কিনে দেয়া। যার মাধ্যমে অতি প্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলা যায়। আর যদি স্মার্টফোন কিনে দিতে হয়, তাহলে অবশ্যই যেন ডাটা কন্ট্রোল থাকে এবং বাচ্চারা কিভাবে ডাটা ব্যবহার করছে সেটা মনিটর করা। অষ্টমত: অভিভাবকদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সম্বন্ধে আপডেট থাকতে হবে। সেটার জন্য একজন অভিভাবক অন্য অভিভাবকের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারেন। সর্বশেষে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের সাথে কথা বলতে হবে। তাদেরকে সময় দিতে হবে। তাদেরকে বিভিনড়ব রকম কার্যμমের সাথে সংয্ক্তু রাখতে হবে। যদি সম্ভব হয় তাদেরকে বই পড়ার দিকে মনোযোগী করতে হবে। আরেকটি ব্যাপার না বললেই নয়, আর তা হলো শিশু-কিশোরদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আসক্তি থেকে মুক্ত রাখতে হলে- অভিভাবকদেরও এ
থেকে মুক্ত থাকতে হবে। আপনি দিনে কয়েক ঘন্টা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডুবে থাকলেন আপনার বাচ্চাদের সামনে আর ওদের বললেন ব্যবহার না করতে, তাহলে কি ওরা আপনার উপদেশ শুনবে । আমেরিকান একাডেমী অব পিডায়ট্রিক্স এর ক্লিনিক্যাল রিপোর্ট দি ইমপ্যাক্ট অব সোস্যাল মিডিয়া অন চিলড্র্যান, এডুলসেন্স এন্ড ফ্যামিলিস অনুসারে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অনেক ভাল দিক যেমন আছে তেমনি অনেক খারাপ দিকও রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সাইবার বুলিং এবং অনলাইন হ্যারাসমেন্ট, সেক্সটিং (যৌন হয়রানিমুলক বার্তা) ও ফেসবুক ডিপ্রেসন। এসব খারাপ দিক গুলো হতে আমাদের সন্তানদের রক্ষা করতে হলে আমাদেরকে আরও সচেতন হতে হবে। সন্তানদের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত হতে হবে। এখনই সময় অভিভাবকদের নিজেদেরকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভাল ও খারাপ দিক সমন্ধে জানা এবং এর প্রয়োগ করা ।
* তৌহিদ চৌধুরী, সাবেক বার্তা সম্পাদক, বাংলা পোস্ট, যুক্তরাজ্য।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top