logo
news image

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০১৮ উদযাপিত

প্রাপ্তি প্রসঙ্গ ডেস্ক।  ।  
‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: অদম্য তের বছর’ স্লোগানে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০১৮’ তথা ১৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে।
এ আয়োজনের মধ্যদিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি চতুর্দশ বছরে পদার্পণ করল। তবে প্রতি বছর ২০ অক্টোবর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করে আসছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীরা। এ বছর ২০অক্টোবর দুর্গাপূজা ও সাপ্তহিক ছুটি থাকায় দুইদিন পিছিয়ে ২২অক্টোবর দিবসটি পালন করার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সোমবার (২২ অক্টোবর) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণীর পেশাজীবীর মানুষ এ আয়োজনে অংশগ্রহণ করেন।
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস:
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (সংক্ষিপ্তরুপঃ জবি বা জেএনইউ) বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার সদরঘাটে অবস্থিত একটি স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। পূর্বতন জগন্নাথ কলেজকে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণার মাধ্যমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু। অধ্যাপক ড: এ. কে. এম. সিরাজুল ইসলাম খান এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করে ১৮৫৮ সালে এবং ২০০৫ সালে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫ পাশ করার মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ নেয়। এখানে প্রায় ২৩,০০০ ছাত্র-ছাত্রী এবং ১,০০০ জন শিক্ষক রয়েছেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অব্যবহিত প্রাক্তন নাম জগন্নাথ কলেজ, এই নামেই বিংশ শতাব্দীর অধিকাংশ সময় জুড়ে পরিচিত ছিল। এটি ঢাকার একটি ঐতিহ্যবাহী কলেজ। ১৮৫৮ সালে ঢাকা ব্রাহ্ম স্কুল নামে এর প্রতিষ্ঠা হয়। ১৮৭২ সালে এর নাম বদলে জগন্নাথ স্কুল করা হয়। বালিয়াটির জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরী তার বাবার নামে জগন্নাথ স্কুল নামকরণ করেন। উল্লেখ্য কিশোরীলাল রায় শিক্ষাবিস্তারে আগ্রহী ছিলেন।[২]
১৮৮৪ সালে এটি একটি দ্বিতীয় শ্রেণীর কলেজে ও ১৯০৮ সালে প্রথম শ্রেণীর কলেজে পরিণত হয়। এসময় এটিই ছিল ঢাকার উচ্চ শিক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা শুরু হলে জগন্নাথ কলেজের স্নাতক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির শিক্ষার্থী, শিক্ষক, গ্রন্থাগারের বই পুস্তক, জার্নাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার সাজাতে জগন্নাথ কলেজ গ্রন্থাগারের ৫০ ভাগ বই দান করা হয়। জগন্নাথ কলেজে আই,এ, আই,এসসি, বি,এ (পাস) শ্রেণী ছাড়াও ইংরেজি, দর্শন ও সংস্কৃতি অনার্স এবং ইংরেজিতে মাস্টার্স চালু করা হলেও ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর তা বন্ধ করে দেয়া হয় এবং ইন্টারমিডিয়েট কলেজে অবনমিত করা হয় জগন্নাথকে। পুরানো ঢাকার নারী শিক্ষায় বাধা দূর করতে ১৯৪২ সালে সহশিক্ষা চালু করা হয়। ১৯৪৮ সালে তা বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে ১৯৪৯ সালে আবার এ কলেজে স্নাতক পাঠ্যক্রম শুরু হয়।১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মাদ রফিকউদ্দিন (ভাষা শহীদ রফিক) আত্মত্যাগ করেন । ১৯৬৩ সালে অধ্যক্ষ সাইদুর রহমান পুনরায় কো-এডুকেশন চালু করেন। ১৯৬৮ সালে এটিকে সরকারীকরণ করা হয়, কিন্তু পরের বছরেই আবার এটি বেসরকারী মর্যাদা লাভ করে। ২০০৫ সালে জাতীয় সংসদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫ পাশের মাধ্যমে এটি পুর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তরিত হয়। বর্তমানে মোট ছয়টি অনুষদের অধীনে ৩৬ টি বিভাগের ও ২টি ইন্সিটিউটের মাধ্যমে এখানে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। ২০শে অক্টোবর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস।
বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদ্বোধন:
সকাল ৯:১০ মিনিটে মিনিটে শহীদ মিনার চত্বরে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন করা হয়। বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের শুভ উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। এসময় ট্রেজারার অধ্যাপক মো. সেলিম ভূঁইয়া, ডিন, রেজিস্ট্রার, চেয়ারম্যান, পরিচালক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
শোভাযাত্রা:
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের নেতৃত্বে ব্যান্ডদলে সুসজ্জিত প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর শোভাযাত্রাটি শহীদ মিনার চত্বর হতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে রায় সাহেব বাজার মোড় ঘুরে, ভিক্টোরিয়া পার্ক পরিক্রমণ করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সমাপ্ত হয়। এসময় ছাত্র-ছাত্রীরা নানা রঙ-বেরঙের টি-সার্ট ও শাড়ি পরে নেচে গেয়ে র‌্যালিতে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া প্রতিটি বিভাগের শিক্ষক-ছাত্রছাত্রী, কর্মকর্তা, কর্মচারীবৃন্দ নিজস্ব বিভাগীয় ব্যানারে র‌্যালিতে অংশগ্রহণ করে।
আলোচনা সভা:
সকাল সাড়ে ১০টায় সামাজিক বিজ্ঞান ভবন চত্বরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, “এবারের বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের আনন্দ বিগত বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে একনেকে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন: ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্পের আর্থিক অনুমোদনের ফলে।
উপাচার্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তারিক ধন্যবাদ জানান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এই মাসেই ঢাকার কেরাণীগঞ্জে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে প্রায় ২০০ একর ভূমি বরাদ্দের চূড়ান্তÍ অনুমোদন প্রদান করে। ৪০ বছর স্বাধীনতার উত্তরকালে এত জমি একসাথে কোন বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রদান করা হয়নি।”
তিনি বলেন, “একনেকে এই প্রকল্পে প্রায় ১ হাজার ৯২০ কোটি বরাদ্দ করা হয়। আর মেগাপ্রকল্পে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ পাবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। কেরাণীগঞ্জে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসে মাস্টারপ্লান অনুযায়ী নতুন ক্যাম্পাসে একাধিক একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, নতুন আরো কয়েকটি অনুষদ, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য হল, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসন ব্যবস্থা, চিকিৎসা কেন্দ্র, ক্যাফেটেরিয়া, খেলার মাঠ, সুইমিং পুল, মসজিদ এবং পরিবহণ ও আধুনিক বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এখন গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রেখে রাখছে। এখানকার শিক্ষার্থীরা দেশ-বিদেশে তাদের কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলছে। আরো অধিকতর মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য যেসব শর্তের প্রয়োজন আমরা শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই মিলে তা পূরণ করছি। এক্ষেত্রে সরকার আমাদের যথেষ্ট সাহায্য-সহযোগিতা করছে, আগামীতেও সবার সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করি। ”
আলোচনা সভায় ‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০১৮’ উদ্যাপন কমিটির সদস্য-সচিব ও রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মোঃ ওহিদুজ্জামান-এর সঞ্চালনায় ট্রেজারার অধ্যাপক মোঃ সেলিম ভূঁইয়া, বিভিন্ন অনুষদের অনুষদের ডিন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. মনিরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ড. মোহাম্মদ আব্দুল বাকী, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মোঃ তরিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেল, জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি, কর্মচারী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রমুখ বক্তব্য প্রদান করেন।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান:
আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে সামাজিক বিজ্ঞান ভবন চত্বরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দের অংশগ্রহণে সংগীতানুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। শিল্পীরা মনোমুগ্ধকর গান পরিবেশন করে দর্শকদের মাতিয়ে রাখে। এদিকে, নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে যাত্রাপাত্রা পরিবেশিত হয়। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ সকলে উদ্বেলিত ও উৎফুল্ল হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তম বর্ষ পূর্তি উদযাপন করে।
শিল্পকলা প্রদর্শনী:
‘শিল্প-সৃজনে আলোকিত হই’ স্লোগানকে সামনে রেখে বেলা ১২টায় নতুন একাডেমিক ভবনের নিচতলায় ‘১ম বার্ষিক শিল্পকলা প্রদর্শনী’র উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের তৈরি করা ছবি ও অন্যান্য শিল্প কর্ম স্থান পায়। এই বার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনী ৪ নভেম্বর পর্যন্ত সকাল ৯টা থেকে দুপুর সাড়ে ৩টা পর্যন্ত চলবে। উল্লেখ্য, এবারই প্রথম বারের মতো বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে বার্ষিক শিল্পকলা প্রদর্শনীর আয়োজন করে।
প্রকাশনা প্রদর্শনী:
‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০১৮’ উপলক্ষে ভাষা শহীদ রফিক ভবন প্রাঙ্গণে জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকশনা দপ্তরের সার্বিক সহযোগিতায় দিনব্যাপী ‘প্রকাশনা প্রদর্শনী’র আয়োজন করা হয়। ১৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ বার্তা প্রকাশ করা হয়। এতে বিগত তের বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরা হয়। প্রকাশনা প্রদর্শনীতে অন্যান্য প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এছাড়াও প্রদর্শনীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গবেষণাধর্মী পুস্তক, জার্নাল ও অন্যান্য প্রকাশনা প্রদর্শনীতে স্থান পায়। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০১৮ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনসমূহ আলোক সজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top