logo
news image

শিক্ষাবীমা বাধ্যতামূলক করছে সরকার

উপার্জনকারী ব্যক্তি হিসেবে পিতা-মাতার মৃত্যু বা অক্ষমতা অনিশ্চয়তায় ফেলে দেয় সন্তানের শিক্ষা গ্রহণ। আর্থিক সংকটে স্কুল থেকে ঝরে পড়ার ঘটনাও কম নয়। অভিভাবকের মৃত্যু বা শারীরিক অক্ষমতার পরও সন্তানের শিক্ষা গ্রহণ যাতে অব্যাহত থাকে, সেজন্য স্কুল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে শিক্ষাবীমা বাধ্যতামূলক করছে সরকার।

এরই মধ্যে এ-সংক্রান্ত নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, অভিভাবকের মৃত্যু বা অক্ষমতার কারণে প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা করে পাবে শিক্ষার্থীরা। বীমাটি বাধ্যতামূলক করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইডিআরএ শিগগিরই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করবে বলে জানা গেছে।

আইডিআরএ বলছে, এরই মধ্যে ১২ লাখের বেশি শিক্ষার্থী স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগের ফলে এখন স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা ব্যাংকমুখী হয়েছে। বড়দের মতোই তাদের মধ্যেও সঞ্চয়ের মনোভাব তৈরি হয়েছে। তবে স্কুল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে বীমা বাধ্যতামূলক করলে এ হার আরো বাড়বে বলে মনে করছে তারা।

আইডিআরএ সদস্য গকুল চাঁদ দাস এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, আমরা একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করেছি। পলিসি তৈরির জন্য অ্যাকচুয়ারি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংক, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আইডিআরএর সমন্বয়ে বাধ্যতামূলকভাবে এটি বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়া হবে।

প্রস্তাবিত খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন সুরক্ষার জন্য ব্যাংক হিসাবের সঙ্গে বীমা সুবিধা প্রচলনের জন্য এ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। বাবা, মা বা অভিভাবকদের মৃত্যু ও অক্ষমতায় আর্থিক সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া যেন বিঘ্নিত না হয়, সেজন্য ন্যূনতম প্রিমিয়ামের বিপরীতে শিক্ষার্থীদের পূর্বনির্ধারিত বীমার টাকা দেয়া হবে। ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দেয়া হবে এ উদ্যোগ।

খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, নতুন এ পলিসির ধরন হবে নবায়নযোগ্য মেয়াদি গ্রুপ জীবন বীমা। ব্যাংক ও বীমা কোম্পানির দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে এটি কার্যকর হবে। এ পলিসির বীমা অংক হবে ১ লাখ টাকা। এছাড়া অভিভাবকের মৃত্যু ঘটলে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা করে প্রদান করবে সংশ্লিষ্ট বীমা কোম্পানি। প্রিমিয়ামের হার হবে মাসে ২৫ টাকা করে বছরে ৩০০ টাকা। ব্যাংক বার্ষিক ভিত্তিতে এ প্রিমিয়াম প্রদান করবে।

প্রস্তাবিত নীতিমালায় শিক্ষার্থীদের সর্বনিম্ন বয়স ধরা হয়েছে পাঁচ বছর ও সর্বোচ্চ ১৭ বছর। পাশাপাশি অভিভাবকদের বয়স হবে ২৫ থেকে ৬৫ বছর। এছাড়া পলিসির মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বনিম্ন এক বছর ও সর্বোচ্চ ১২ বছর।

শিক্ষাবীমা সুবিধা গ্রহণের পরবর্তী মাসের ১ তারিখ থেকে তা কার্যকর হবে। শিক্ষার্থীর বয়স ১৮ ও অভিভাবকের বয়স ৬৫ বছর পূর্ণ হলেই বীমা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে বিবেচিত হবে।

মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দীন আহমেদ বলেন, এ ধরনের প্রডাক্ট আমাদের বীমা খাতে নতুন। এর মাধ্যমে বীমা খাতে যেমন বৈচিত্র্য আসবে, একইভাবে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশেও দাঁড়ানো হবে।

খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, বীমা সুবিধা শুধু শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য দেয়া হবে। বীমা প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের তথ্যের ওপর নির্ভর করবে এবং ব্যাংক প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করবে। ব্যাংক ও বীমা প্রতিষ্ঠান উভয়ই তথ্যের গোপনীয়তা বজায় রাখবে। বীমা প্রিমিয়াম ও বীমা দাবি উভয়ই ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পাদিত হবে।

নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের এ ধরনের উদ্যোগ প্রশংসার দাবিদার বলে মন্তব্য করেন প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জালালুল আজীম। তিনি বলেন, বাইরের দেশগুলোয় শিক্ষাবীমার বাধ্যবাধকতা থাকলেও আমাদের এখানে নেই। তবে সরকারের নতুন এ উদ্যোগ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে তুলতে ভূমিকা রাখবে।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top