logo
news image

কবি জীবনানন্দ দাশের ৬৪তম মৃত্যুবার্ষিকী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঝালকাঠি।  ।  
সোমবার (২২ অক্টোবর) রূপসী বাংলার প্রখ্যাত কবি জীবনানন্দ দাশের ৬৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি জীবনানন্দ দাশ জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার শুক্তাগড় ইউনিয়নের বামনকাঠি গ্রামে। বামনকাঠি এলাকায় কবির পৈতৃকভিটা অযত্নে-অবহেলায় পড়ে আছে। এমনকি জীবনানন্দ দাশের কবিতার বিখ্যাত সেই ধানসিঁড়ি, রূপসীয়া ও জাঙ্গালীয়া নদী আজ অস্তিত্ব হারিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। দেশ-বিদেশের বহু পর্যটক জীবনানন্দের জন্মভিটা দেখতে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। জীবনানন্দ দাশ তার শৈশব থেকে কৈশোর এমনকি যৌবনের অনেক সময় পার করেছেন রাজাপুরের এই বামনকাঠি এলাকায়। তার বহু লেখনীতে ধানসিঁড়ি নদীর রূপ নিয়ে তিনি লেখেন। কবির লেখনীতে সেই ধানসিঁড়ি নদী পরিচিতি পায় দেশ-বিদেশে। কিন্তু কালের স্রোতে হারিয়ে যেতে বসেছে সেই জীবনানন্দ দাশের ধানসিঁড়ি নদী। এক সময়ের খরস্রোতা ধানসিঁড়ি নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। ৬ বছর আগে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে খনন প্রকল্প হাতে নেয়া হলেও তা লুটপাটেই শেষ হয়ে গেছে। রাজাপুর থেকে ঝালকাঠি গাবখান পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটারের অর্ধেকেরও বেশি অংশ রয়েছে অস্তিত্ব সংকটে।
অপরদিকে ধানসিঁড়ি নদীর পার্শ্ববর্তী বামনকাঠি এলাকায় জীবনানন্দ দাশের পৈতৃক ভিটেও আজ জঙ্গলঘেরা। বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত আর মেঠোপথের এক প্রান্তে কোনো মতে দাঁড়িয়ে আছে সেটি। কিছু গাছপালা ও একটি পুকুর ছাড়া অবশিষ্ট আর কিছুই নেই সেখানে। বছর ত্রিশ আগেও পূর্বপুরুষরা এখানে বসবাস করতেন। সবকিছু ছেড়ে কলকাতা পাড়ি জমিয়েছেন তারাও। তবে স্থানীয়দের কাছে এখনও ওই বাড়িটি ‘দাশের ভিটা’ বলে পরিচিত।
১৯৫৪ সালের এ দিন তিনি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। জীবনানন্দ দাশের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান আলোচনা, আবৃত্তি ও সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
কবি জীবনানন্দ দাশ বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাংলা কবি। তাকে বাংলা ভাষার শুদ্ধতম কবি বলে আখ্যায়িত করা হয়েছ। তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অগ্রগণ্য। মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর শেষ ধাপে তিনি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন এবং ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে যখন তার জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছিল, তত দিনে তিনি বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয়তম কবিতে পরিণত হয়েছেন।
কবি জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বরিশাল জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯১৯ সালে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে সম্মানসহ বিএ এবং ১৯২১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রি নেন।
জীবনানন্দ দাশ ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ৯ মে ঢাকার ব্রাহ্মসমাজ মন্দিরে রোহিনীকুমার গুপ্তের মেয়ে লাবণ্য গুপ্তকে বিয়ে করেন। তার মেয়ে মঞ্জুশ্রী দাশ এবং ছেলে সমরানন্দ দাশ।
বামনকাঠি এলাকার আলী সিকদার বলেন, ‘ঢাকা ও কলকাতা থেকে বহু লোক আমাদের এখানে জীবনানন্দ দাশের বাড়ি দেখতে আসে। কিন্তু তারা শুধু জঙ্গল দেখে ফিরে যায়। আমরাও বিব্রত হই। আমাদের দাবি জীবনানন্দের বাড়িটিতে একটি স্মৃতিফলক দিয়ে এটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হোক।’ কবি জীবনানন্দ দাশের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঝালকাঠি জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে জেলা প্রশাসক আলোচনা সভা, কবিতা আবৃত্তি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছেন।
রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘রূপসী বাংলার কবিকে বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে তার স্মৃতি রক্ষার জন্য আমরা পদক্ষেপ নেব। অতি শিগগিরই তার পৈতৃক ভিটা সংরক্ষণের জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বরাবর লিখিত আবেদন করা হবে। এছাড়া ইতিমধ্যেই ধানসিঁড়ি নদী খননের পুনরায় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top