logo
news image

শ্রদ্ধা জানাতে বড়াইগ্রাম থেকে শহীদ মিনারে মাসুম

প্রাপ্তি প্রসঙ্গ ডেস্ক।  ।  
বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) মাত্র ৫৬ বছর বয়সে আইয়ুব বাচ্চু শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। জনপ্রিয় এই শিল্পীর মৃত্যুতে সারাদেশে শোকের ছায়া নেমে আসে। মৃত্যুর সংবাদ কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না আইয়ুব বাচ্চুর অন্ধ ভক্ত রাশেদ খান মাসুম (৩৯)। বিগত ১২ থেকে ১৩ বছর থেকে তিনি আইয়ুব বাচ্চুর গান শুনছেন নিয়মিত।
পকেটে থাকা মোবাইলেও ৫৩টি গান রয়েছে আইয়ুব বাচ্চুর। তাইতো প্রিয় শিল্পীর মৃত্যুতে নাটোরের বড়াইগ্রাম থেকে ছুটে এসেছেন তিনি। পেশায় মুদি ব্যবসায়ী মাসুম।
সর্বসাধারণের পক্ষ থেকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে জন্য শুক্রবার (১৯ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টায় আইয়ুব বাচ্চুর মরদেহ রাখা হয়েছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। শহীদ মিনারে সকাল থেকেই হাজারও ভক্তের স্রোত। মাসুমের চোখের জলে স্রোত যেন কয়েকগুণ বেড়ে গেছে।কান্নারত অবস্থায় মাসুম।
সরাসরি নাটোর থেকে শহীদ মিনারে পৌঁছানোর আগে প্রিয় শিল্পীকে শ্রদ্ধা জানাতে একটা লাল গোলাপ কিনেছেন শাহবাগ থেকে। শ্রদ্ধা জানানোর উদ্দেশ্য দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়ে অঝরে কান্না করছেন মাসুস। কেউ তাকে শান্তনা দিতে পারছেন না।
প্রিয় শিল্পীর অকাল প্রয়াণে মাসুম বলেন, আমি নাটোর বড়াইগ্রাম থেকে উনাকে (আইয়ুব বাচ্চু) শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। ‘চলো বদলে যাই’ ‘এই রুপালি গিটার’ ‘ফেরারি মন’ ‘হাসতে দেখো’ ‘এখন অনেক রাতসহ বসের ৭০ থেকে ৮০ গান আমার মুখস্ত।’
মৃত্যুর সংবাদ প্রসঙ্গে মাসুম বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠছি। এমন সময় আমার এক বন্ধু ফোন করে বলে আইয়ুব বাচ্চু মারা গেছেন। তখন আমি তাকে বললাম এটা কিন্তু কোনো ইয়ার্কি (হাস্যরস) করার বিষয় না! সত্যি বলো ঘটনা কি! আমি বন্ধুর কথা বিশ্বাস করিনি। তার পরে টিভিতে স্ক্রলে দেখি আইয়ুব বাচ্চু আর নেই। তখন দুপুরে রওয়ানা দিয়ে রাতে এক আপার বাসায় থেকে শহীদ মিনারে আসছি। এই বলে কাঁদতে থাকেন মাসুম,,,,,।
আরেক ভক্ত মাজেদুর রহমান। তিনি ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ থেকে এসেছেন। তিনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। ২০০০ সাল থেকে আইয়ুব বাচ্চুর গান শুনেন।
মাজেদুর বলেন, গুরু মারা গেছেন বিশ্বাস হয় না। মনে হচ্ছে আমার রক্তের ভাই মারা গেছেন।’ হাজার ভক্তের অশ্রুজলে সিক্ত হয়েছে জাতীয় শহীদ মিনার। কান্না চেপে রাখতে পারেননি সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
সকাল থেকেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে আইয়ুব বাচ্চুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ভক্তরা। একে একে শ্রদ্ধা জানায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সহযোগী সংগঠন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ছাত্র, যুব, শ্রমিক, কৃষক সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ। ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় শহীদ মিনার। সময় স্বল্পতার কারণে অনেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারেননি।
নারায়ণগঞ্জ রূপপুর থেকে এসেছেন সুমি আক্তার। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে প্রিয় শিল্পীকে শ্রদ্ধা না জানাতে পেরে কান্না করতে করতে শহীদ মিনার ছাড়েন তিনি।
অনেক ভক্ত শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আরও সময় দাবি করেন। অবশেষে সর্বস্তরের মানুষের শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের পর আইয়ুব বাচ্চুর মরদেহ নিয়েও যাওয়া হয় হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠে। অবশেষে অনেক ভক্ত মরদেহের পেছনে ফুল নিয়ে ছুটতে থাকেন। অনেকে আবার কান্না করতে করতে দুই হাত তুলে প্রিয় শিল্পীর জন্য উপরয়ালার কাছে মোনাজাত করেন!

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top