logo
news image

হরিজন শিশুদের পাশে নবজাগরন

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাবি।  ।  
শনিবার (১৩ অক্টোবর) বিকাল ৩ টা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ ইসমাঈল হোসেন সিরাজী ভবন থেকে ভেসে আসছে বাচ্চাদের চেচামেচী। শুনে প্রথম ক্ষণে কোনো মারামারি বা স্পোর্টস ইভেন্ট এর কথা মনে হলেও কাছে যেতেই বিষয়টি সামনে এলো। সত্যি সত্যি বাচ্চাদের চেচামেচী, তবে সেটা কোন খেলা বা অন্য অনুষ্ঠানের না। এই চিৎকার পূজোর আনন্দের, নতুনকে পাওয়ার। এই হৈ হুল্লোর তৃপ্তির। সনাতন ধর্মের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজায় যখন সব শিশুরা নতুন জামা পরে মন্ডপে মন্ডপে ঘুরে, তখন এই শিশুরা থাকে অপূর্ণ। তারা একটি নতুন জামার জন্য কান্নাকাটি করে।আর তাদের এই চোখের জলকে প্রশমিত করতেই বিগত বছরগুলোর ন্যায় মাঠে নেমেছে ‘'নবজাগরন ফাউন্ডেশন’'।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সংগঠনটি একের পর এক শিশুর মুখে হাসি ফুঁটিয়ে চলেছে। বরাবরের মত ঈদের নতুন জামা দেয়ার পাশাপাশি এরা গত ৪ বছর থেকে প্রতি দুর্গাপূজার আগে দিয়ে আসছে “পূজার নতুন জামা।
এরই ধারাবাহিকতায় আজ তারা হরিজন সম্প্রদায়ের প্রায় ৬০ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে নতুন জামা প্রদান করে।
যখন সমাজের উচুতলার মানুষগুলো নিম্নবিত্তের বলয়ে থাকার মানুষগুলোর দিকে সুনজরে তাকাতেও ভুলে যায়, তখনই বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু উদ্যোমী তরুন তাদের পাশে এসে দাঁড়ায় ২০১৪ সাল থেকে। এই হরিজন পল্লীতেই তারা প্রতিষ্ঠা করে ‘নবজাগরণ শিক্ষা নিকেতন’ নামের একটি সেচ্ছাসেবী স্কুল।যেখানে তারা শিক্ষা দিয়ে থাকে হরিজন সম্প্রদায়ের শিশু এবং পার্শ্ববর্তী রেললাইন ঘেষা বস্তির বাচ্চাগুলোকে। আর এই সকল বাচ্চাগুলোর জন্য যখন একটি নতুন জামা পড়ার ইচ্ছা আকাশকুসুম কল্পনা, তখনি তাদের পাশে এসে দাড়িয়েছে সংগঠনটি।
নবজাগরনের এই পূজার নতুন জামা বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য প্রফেসর ড.আনন্দ কুমার সাহা।  এছাড়াও অতিথি ছিলেন, ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর ড. লায়লা আরজুমান বানু, সমাজকর্ম বিভাগের প্রফেসর ড.ছাদেকুল আরিফিন মাতিন, পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ মনিমুল হক, সহকারী অধ্যাপক সাদিকুল ইসলাম সাগর, সমাজসেবা কর্মকর্তা আশিকুজ্জামান।
নবজাগরণের বর্তমান সভাপতি খন্দকার মার্জান আতিক কিরণের সভাপতিত্ত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ নাঈম হোসাইনের সঞ্চালনায় "পূজার নতুন জামা বিতরণ-২০১৮" অনুষ্ঠানটি পরিচালিত হয়।  "পূজার নতুন জামা বিতরণ -২০১৮ " অনুষ্ঠানটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ ইসমাঈল হোসেন সিরাজী ভবনের ১২১ নং রুমে (ইতিহাস গ্যালারী ) বিকাল -৩ টায় অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ড.আনন্দ কুমার সাহা বলেন, আমি সন্তোষ প্রকাশ করছি এই অনুষ্ঠানে থাকতে পেরে।তিনি বাচ্চাদেরকে 'জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ' স্লোগান দেওয়ান। তারপর তিনি সকলকে পূজার অগ্রীম শুভেচ্ছা জানান। তিনি এরপর থেকে এই সংগঠনের সব অনুষ্ঠানে নিজেকে সংযুক্ত রাখারও আশ্বাস দেন। তিনি বাচ্চাদেরকে বঙ্গবন্ধুর মতাদর্শে একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য প্রত্যয়ী হতে আহবান করেন।"
অতিথিদের বক্তব্যে প্রফেসর ড. লায়লা আরজুমান বানু বলেন, "আজকাল তো সেচ্ছাসেবী দেখা ই যায় না। আমি ধন্যবাদ জানাই এই সংগঠনের সকল সদস্যকে আজকের মত এমন একটা অনুষ্ঠানে আমাকে আসার সুযোগ করে দেয়ার জন্য।তিনি তাঁর ছাত্র জীবনকালীন সময়ের সেচ্ছাসেবীদের নিয়ে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেন।"
প্রফেসর ড. ছাদেকুল আরেফিন মাতিন বলেন, "এধরনের সংগঠনকে মন থেকে আমি সাপোর্ট করি,আর নবজাগরণের প্রথম থেকেই আছি। পূজার আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য ফাউন্ডেশন যে বস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে, সত্যিই এটা প্রশংসার দাবিদার।"
মোঃ মনিমুল হক বলেন, ’হরিজন পল্লির উন্নয়নের এর জন্য আন্তরিক ভাবে কাজ করে যাচ্ছে নবজাগরণ ফাউন্ডেশন,আর তাদের এই ধরনের প্রোগ্রাম অবশ্যই প্রশংসার দাবী রাখে।আমাদের সবার নিজ নিজ জায়গা থেকে এভাবেই পিছিয়ে পড়া জনগনের পাশে দাঁড়ানো উচিত।ধর্ম পৃথক হলেও উৎসব সবার’, এ সময় তিনি এই ফাউন্ডেশনের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করেন।
আশিকুজ্জামান তার বক্তব্যে বলেন, "এই হরিজন পল্লিতে এরকম একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা একটি অনন্য প্রয়াস,আর তার সাথে আজকের এই উদ্যোগ সত্যি অনন্যসাধারন। সেই সাথে নবজাগরণ সাথে থাকার এবং সর্বত্ত্বম সহযোগীতা করার আশ্বাস দেন। "
সংগঠনটির সভাপতি খন্দকার মার্জান আতিক কিরণ তার বক্তব্যে বলেন, "ঈদ যেমন মুসলমানদের খুশির উৎসব, তেমনি পূজাও হিন্দুধর্মালম্বীদের সবচেয়ে খুশির উপলক্ষ,আর এই খুশির উপলক্ষে আমরা কোন শিশুর মুখ মলিন দেখতে চাইনা’। এ সময় তিনি হরিজন পল্লিতে একটি স্কুল স্থাপনের জন্য সমাজের বিত্তশালী এবং সরকারের এগিয়ে আসতে আহ্বান জানান।"
অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক সুরেশ্বর মন্ডল তার বক্তব্য বলেন, "ভালো কাজ করার সুযোগগুলো কম সময়ে আসে। নবজাগরণ ফাউন্ডেশন কোন সুযোগকে মিস্ করে না। এই জামাগুলো এই সব কচি কচি বাচ্চাদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। আগামীতেও এই ধারা অব্যাহত রাখবে নবজাগরণ ফাউন্ডেশন।"
পূজার নতুন জামা পেয়ে নিভা নামের এক শিক্ষার্থী জানান, "আমি কখনো ভাবতে পারিনি পূজা শুরু হওয়ার আগে একটা নতুন জামা পাবো, এটা আমার পূজোর আনন্দকে অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে,আমার অনেক খুশি লাগছে" ।
এ সময় প্রসেনজিত নামের এক শিক্ষার্থী বলে, "স্যারেরা আমাদের শিক্ষার পাশাপাশি সবসময়ই জামা, পড়ার বইখাতা, রং পেন্সিল, খেলনা দেন, উনারা অনেক ভালবাসেন আমাদের"।
অনুষ্ঠানে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন নবজাগরণ ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টামন্ডলী, কার্যকরী কমিটির সদস্যবৃন্দ, ভলেন্টিয়ারসহ বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক।
উল্লেখ্য,২০১২ সালের কিছু স্বপ্নবাজ তরুনের হাত ধরে যাত্রা শুরু করেছিল নবজাগরন ফাউন্ডেশন, যা আজ বিশ্ববিদ্যালয়টির সর্ববৃহৎ সেচ্ছাসেবী সংগঠন।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top