logo
news image

আর্কাইভ হচ্ছে অধ্যাপক মো: হাশেমের গান

নিজস্ব প্রতিবেদক।  ।  
নোয়াখালীর আঞ্চলিক গানের জনক অধ্যাপক মো: হাশেম এর কালজয়ী গানগুলো সংরক্ষণ করার উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি দু্ই দফা শিল্পীর প্রায় ৩০টি গান ধারণ করা হয়েছে এবং প্রতিদিন বিকেল ৫টায় একটি করে গান প্রকাশ পাচ্ছে।
ইউটিউব ভিত্তিক অনলাইন টিভি চ্যানেল নোয়া ভিশন এমন উদ্যোগ নিয়েছে। চ্যানেলটির প্রতিষ্ঠাতা ব্যক্তিবর্গের মধ্যে রয়েছেন- সাজ্জাদ রাহমান, জহির হক এবং আনোয়ার সবুজ।
এ প্রসঙ্গে পরিচালক সাজ্জাদ রাহমান বলেন- ‘অধ্যাপক মো: হাশেম একজন বিরল প্রতিভার অধিকারী কালজয়ী গীতিকবি। তাঁর গান শুধু নোয়াখালীর নয়, গোটা দেশের তথা বৈশ্বিক সম্পদ। অধ্যাপক মো: হাশেম এর গান শুধু গান নয়, সেখানে একদিকে যেমন রয়েছে নোয়াখালী জেলার আদি এবং অকৃত্রিম ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস- তেমনি রয়েছে প্রান্তিক থেকে শুরু করে নাগরিক জীবনের গল্প। তাদের ভাবনা, প্রবৃত্তি, আচার, উপলব্ধি, সীমাবদ্ধতা, প্রেম, বিরহ, মোহ, হাতাশা অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় এইসব গানে উঠে এসেছে।
একজন চিত্রকর যেমন ছবি আঁকেন, একজন গল্পকার যেমন গল্প লেখেন কিংবা নাট্যকার লেখেন নাটক, অধ্যাপক মো: হাশেম এর গানে আমরা ঠিক একই ধরণের দৃশ্যকল্প দেখতে পাই। তাঁর গান কখনও শিল্পীর পটে আঁকা ছবি, নাট্যকারের নাটক, কখনও জীবনমুখী গল্প। তাঁর গানে কখনও কখনও চরিত্র দেখতে পাওয়া যায়, সেই চরিত্রগুলোয় থাকে মানুষের জীবন যাপনের নানা দিক। একই সাথে পাই সৃষ্টিতত্ত্ব তথা আধ্যাত্ববাদ।’
তিনি আরও বলেন- ‘মো: হাশেম তাঁর গানে যেভাবে বহুমাত্রিক ব্যাঞ্জনা সুষ্টি করেছেন, সেটি সমসাময়িক কিংবা বিশ্ব গানের ভান্ডারে খুব কমই খুঁজে পাওয়া যায়। এজন্য তাঁর গানকে আমি কখনোই আঞ্চলিক গান বলবোনা, বলবো নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় লেখা মো: হাশেম এর গীতি-কবিতা। কেননা তাঁর গান একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলকে ছাড়িয়ে বহুমাত্রিকতায় পরিব্যপ্ত। তিনি গীতিকার নন, তিনি গীতিকবি। তিনি যদি তাঁর গান লেখার ভাষাটাকে নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষা হিসেবে না নিয়ে প্রমিত গদ্যকে বেছে নিতেন, তাহলে এতোদিনে বিশ্ব সাহিত্যে তাঁকে নিয়ে কাড়াকাড়ি সৃষ্টি হতো।
তার মধ্যে যেমন সৃষ্টির সহজাত প্রতিভা রয়েছে তেমনি রয়েছে শিক্ষার আলো। তিনি একই সাথে যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় মাস্টার্স, তেমনি সঙ্গীত কলেজ থেকেও গ্র্যাজুয়েট। তিনি বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ পল্লিগীতি শিল্পী আবদুল আলিম এর সবচাইতে প্রিয় ছাত্র, আবার সঙ্গীত কলেজের শিক্ষকও। সুতরাং তাঁর গানগুলো ব্যাকরণের মাপকাঠিতে উর্ত্তীণ্য, মহত্তম সৃষ্টি। বাংলা সাহিত্যের সাধক বলেই হয়তোবা তাঁর গানে আমরা উপমা, অনুপ্রাস, উৎপ্রেক্ষা, অন্তমিলের নান্দনিক প্রকাশ দেখতে পাই। শব্দচয়ন, শব্দ বিন্যাসে রয়েছে সহজাত মুন্সীয়ানা। তাঁর গানে যেভাবে চিত্রকল্প, রসবোধ, চরিত্র সৃষ্টি, সংলাপ, ভাব বৈচিত্রের প্রকাশ ঘটেছে, বিশ্ব সঙ্গীত ভান্ডারে তা বিরল।
অধ্যাপক মো: হাশেম এর গানের চরিত্রগুলোর বেশীরভাই আমাদের গ্রামবাংলার খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। আর এই মানুষগুলোকে হাশেম যেভাবে নিবিড়ভাবে অবলোকন করেছেন, অনুধাবন করেছেন তাঁদের মনোজাগতিক ভাবনা, স্বপ্ন, ভ্রান্তি ও বৈকল্য; যা দেখে বিস্মিত হতে হয়। মো: হাশেম এর পর্যবেক্ষণ শক্তি অসাধারণ। কোনো একদিন আসবে, যেদিন দেশেরতো বটেই, বর্হিবিশ্ব থেকে মানুষ এদেশে আসবে হাশেম এর সৃষ্টির উপর গবেষণা করতে, এটি আমি সর্বান্তকরণে বিশ্বাস করি।
আমরা অনেক দেরিতে কাজটি শুরু করেছি, যেটি আরও অনেক আগে থেকে শুরু করা উচিত ছিলো, একই সাথে বলবো তিনি যথাযথ মূল্যায়ণ পাননি। তাঁকে নোয়াখালীর আঞ্চলিক গানের শিল্পী হিসেবে একটি নির্দিষ্ট গন্ডিতে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এবং এটাও সত্যি তাঁর সৃষ্টিকে বর্তমানে তাঁর পরিবারই শুধু ধরে রেখেছে। তাঁর অনুজ ভাই মো: কামাল উদ্দিন, বড় মেয়ে শাহনাজ হাশেম কাজল, কণিষ্ঠপুত্র রায়হান কায়সার হাশেম এর কন্ঠে বেঁচে আছে অধ্যাপক মো: হাশেম এর গান।
আমাদের দেশের লোক সঙ্গীতের সাধক লালন ফকির, হাছনরাজা, ফকির কালু শাহ, শাহ আব্দুল করিম এর মতোই মো: হাশেম একজন সাধক, অথচ অন্যদের গান যেভাবে গীত হয়েছে, চর্চা হয়েছে বা হচ্ছে সেভাবে হয়নি। হয়তোবা নোয়াখালীর আঞ্চলিক গান শুনেই পিছিয়ে রয়েছে, কিন্তু এর গভীরে কেউ প্রবেশ করেননি, তাই এর উৎকৃষ্টতাও অনুধাবন করতে সক্ষম হননি। এজন্যে নোয়াখালীর শিল্পী সমাজের ব্যর্থতা রয়েছে বলে আমি মনে করি।
আমরা স্যারের গানগুলোকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে চাই। যাতে গানগুলোর কথা ও সুর অবিকৃত থাকে। একই সাথে তাঁর স্বকন্ঠেও ধারণ করছি, যাতে করে কিছু সঙ্গীতের সাথে সাথে স্রষ্টাও দৃশ্যমান থাকে।
আমাদের টিমে রয়েছে ডিবিসিব নিউজ এর জ্যৈষ্ঠ চিত্রগ্রাহক আনোয়ার সবুজ, তেমনি রয়েছেন বহুমুখি প্রতিভার অধিকারী এবং যিনি মনে প্রাণে স্যারের গানকে ভালোবাসেন- জহির হক। মূলতঃ এই দুই ব্যক্তি না থাকলে কাজটি অনেক কঠিন হয়ে যেতো। একই সাথে এই প্রকল্পে উৎসাহ যোগাচ্ছেন অধ্যাপক মো: হাশেম এর জামাতা অধ্যাপক মামুনুর রশিদ, বড় মেয়ে শাহনাজ হাশেম কাজল, বড় ছেলে মোস্তফা মনোয়ার সুজন, ছোট ছেলে রায়হান কায়সার হাশেম, কণিষ্ঠ কন্যা সামিরা হাশেম, ছোট ভাই মো: কামাল উদ্দিন এবং স্ত্রী রওশন আরা।
বঙ্গবন্ধু যেমন বঙ্গবন্ধু হতে অসামান্য ভুমিকা রেখেছিলেন বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, তেমনি অধ্যাপক মো: হাশেম এর সৃষ্টির পেছনে যাঁর অসামান্য অবদান, তিনি এই রওশন আরা। তাকে ছাড়া অধ্যাপক মো: হাশেম এর উপর থিসিস অসম্পূর্ণ থাকবে।’

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top