logo
news image

নাটোর দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্রের যন্ত্রপাতি স্থানান্তর

নিজস্ব প্রতিবেদক, নলডাঙ্গা (নাটোর)
দুধ সংগ্রহ বন্ধের প্রায় সাত মাস পর এবার নাটোর দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্রের ফার্মকুলার ও জেনারেটর টাঙাইলে স্থানান্তর করা হয়েছে। বিষয়টি জানার পর এলাকার খামারীরা পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। বুধবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জেনারেটর এবং আগের দিন মঙ্গলবার ৫ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ফার্মকুলার ট্রাকযোগে টাঙ্গাইলে পাঠানো হয়।
নাটোর দুগ্ধ শীতলীকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সেকেন্দার আলী জানান, তাঁকেও বাঘা-চারঘাট এলাকা কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার করে চিঠি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
তথ্যমতে, ২০০২ সালে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের আওতায় নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার বাসুদেবপুরে ১ একর জায়গায় ৫ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন 'নাটোর দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্র' চালু করা হয়। বর্তমানে শীতলীকেন্দ্রটি ২ একর জায়গায় সম্প্রসারিত করা হয়েছে। শীতলীকেন্দ্রটি চালূ হওয়ার পর এলাকায় ৫০-৬০ টি সমিতির আওয়াতায় দেড় শতাধিক খামার গড়ে ওঠে। খামারীরা তাদের গরুর দুধ নিয়মিতভাবে দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্রে পাঠিয়ে থাকেন।
কিন্তু দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্রে দুধের দাম তুলনামূলকভাবে কম দেয়ার অভিযোগে খামারীরা দুধ সরবরাহ কমিয়ে দেন। ধীরে ধীরে খামারীর সংখ্যা কমে ১৪টি সমিতির আওতায় ১ শ খামারীতে নেমে আসে। উভয় পক্ষে টানাপোড়নের ধারাবাহিকতায় গত ১৪ ফেব্রুয়ারি চাহিদা অনুযায়ী দুধ সরবরাহ না পাওয়ার কারণ উল্লেখ করে শীতলীকরণ কেন্দ্রে দুধ সংগ্রহ বন্ধ ঘোষণা করেন কতৃপক্ষ। এরপর স্থানীয় খামারীরা কতৃপক্ষের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাস্তায় দুধ ঢেলে প্রতিবাদ-মিছিল করলেও কোন ফল পাওয়া যায়নি। অবশেষে শীতলী কেন্দ্রের ফার্মকুলার ও জেনারেটরও টাঙ্গইলে স্থানান্তর করা হল।
এ ব্যাপারে স্থানীয় খামারী, নলডাঙ্গা উপজেলার বিপ্রবেলঘড়িয়া গ্রামের প্রদীপ কুমার জানান, তার খামারে ৭টি গরু রয়েছে। গত ১৪ ফেরুয়ারি দুধ সরবরাহ বন্ধ করলেও পূণরায় তা চালু করা হবে এমন আশা থেকে বিভিন্ন চা দোকান, বাজার ও বাড়ি বাড়ি দুধ বিক্রি করে কোনমতে খামারটি পরিচালনা করে আসছিলেন। কিন্তু শীতলীকরণ কেন্দ্রের ফার্মকুলার ও জেনারেটর স্থানান্তর হওয়ায় আমরা হতাশায় পড়ে গেছি। স্থানীয় বিভিন্ন সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে খামার করলেও এখনও পর্যন্ত সেই ঋণ পরিশোধ করতে পারিনি। দুধ বিক্রির জায়গা বন্ধ হয়ে গেলে খামার বন্ধ করে দিতে হবে। আর তা হলে ঋণের টাকা পরিশোধ সহ সংসার চালানো নিয়ে পড়বো বেকায়দায়। তিনি স্থানীয় খামারীদের কথা বিবেচনা করে স্বল্প পরিসরে হলেও শীতলীকরণ কেন্দ্রটি পূণরায় চালুর দাবী জানান।
এ ব্যাপারে বানুরভাগ গ্রামের খামারী নজরুল ইসলাম জানান, দুগ্ধ শীতলীকেন্দ্রটি স্থাপিত হওয়ার পর থেকে তারা দুধ সরবরাহ করে সংসার চালিয়ে আসছিলেন। এখন কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেলে তারা চলবেন কি করে? তার মত ১০০টি খামারীর ১০০টি সংসারে নেমে আসবে অসহনীয় দুর্যোগ। কেন্দ্রটি দ্রুত চালূ করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণে তিনি সরকারের সহায়তা কামনা করেন।
নাটোর দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সেকেন্দার আলী বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, গত ২২ সেপ্টম্বর মন্ত্রণালয়ের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন, অর্থ ও সমিতি) উপ-সচিব মনজুর কাদির স্বাক্ষরিত এক জরুরি তাগাদাপত্র পাওয়ার পর মঙ্গলবার ফার্মকুলার মেশিন ও বুধবার জেনারেটরটি টাঙ্গাইল দুগ্ধ শীতরীকরণ কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। একই সাথে তাকেও বাঘা-চারঘাট কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজারের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, কেন্দ্রের নির্দেশনা তিনি পালন করেছেন মাত্র। দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্রটি পূণরায় চালু করা বা না করার সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষের। এ ব্যাপারে তিনি কোন মন্তব্য করতে পারবেন না।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top