logo
news image

বিজ্ঞানের মজার দিন

মোয়াজ্জেম আফরান, শাবি
পুরো আবহাওয়াটাই অন্যরকম। ১ হাজার ৬০০ শিক্ষার্থীর মোটামুটি সবাই ব্যস্ত নিজ নিজ পয়েন্ট অর্জনে। নির্দিষ্ট পয়েন্ট অর্জন করতে পারলেই যে তার জন্য রয়েছে আকর্ষণীয় সবকিছু।
আর এ পয়েন্ট অর্জনে তাকে খেলতে হচ্ছে বিজ্ঞানবিষয়ক বেশকিছু গেমস, করতে হবে সমস্যার সমাধান, চাইলে বিজ্ঞানবিষয়ক বিভিন্ন প্রশ্নও করতে পারবে। এসব সমাধান করতে পারলে মিলবে পয়েন্ট। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে পয়েন্ট যোগ হচ্ছে ‘ফেডারেল ব্যাংক অব ফান ডে উইথ সায়েন্স’-এ। আর কিছু সময় পরেই অর্জিত পয়েন্ট দিয়ে অংশগ্রহণকারীরা কিনছে খাবার, বই। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘লাভ ফর সায়েন্স’-এর আয়োজনে চার দিনব্যাপী বিজ্ঞান উৎসবের চতুর্থ দিনের চিত্র এটি। আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সারা দেশে এ ধরনের আয়োজন এবারই প্রথম। উৎসবে সার্বিক সহযোগিতায় ছিল বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশন। বিজ্ঞানের জন্য ভালোবাসার সভাপতি ইব্রাহিম ফাহাদ জানালেন, বিজ্ঞানকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উন্মুক্ত ও মজার করে দিতে তারা শেষদিনে আয়োজন করে ‘ফান ডে উইথ সায়েন্স’-নামক সেশনের। এ সেশনে সিলেটসহ ঢাকার দুটি স্কুল-কলেজের মোট ১ হাজার ৭০০ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে আগে থেকেই রেজিস্ট্রেশন করতে হয়েছিল। প্রত্যেকের পয়েন্ট হিসাবের জন্য আলাদা আইডি কার্ড করা হয়েছিল এবং প্রত্যেকের তথ্য কিউআর কোডের মাধ্যমে কার্ডটিতে স্থাপন করা হয়েছিল বলে জানান তিনি। এ তো গেল শেষদিনের কথা। সম্প্রতি চার দিনের এ আয়োজনে ক্যাম্পাস ছিল লোকে লোকারণ্য, চারদিকে সাজ সাজ রব বিরাজমান। কোমলমতি বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষার্থীদের পদচারণায় পুরো ক্যাম্পাস হয়ে ওঠে মুখরিত। প্রথম দিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ছিল কমিক কার্টুন প্রদশনী। আমাদের বাস্তবিক জীবন ধারার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বিজ্ঞানের ব্যবহারকেই তুলে ধরা হয়েছে এই কার্টুন প্রদশনীর মাধ্যমে। পরদিন ছিল কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে কমিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। তৃতীয় দিন কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে বিজ্ঞান মেলায় দেখা গেল প্রত্যেকেই নিজের প্রজেক্টকে সেরা প্রমাণে ব্যস্ত। কথা হয় পরিবেশবান্ধব এয়ারকুলারের মডেল নিয়ে মেলায় অংশগ্রহণকারী জালালাবাদ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী নাঈমের সঙ্গে। তিনি এরকম বিজ্ঞানভিত্তিক উৎসবে প্রথম অংশগ্রহণকারী। তিনি বলেন, ‘এ উৎসবে অংশগ্রহণ করে বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ পেয়েছি। বন্ধুদের সহযোগিতা নিয়ে এয়ারকুলার তৈরি করেছি। প্রথমে কাজটা শুরু করতে যতটা কঠিন মনে হয়েছিল, আসলে ততটা কঠিন নয়।’ ‘বিজ্ঞান মেলা’ এবং ‘ফান ডে উইথ সায়েন্স’ এই প্রতিযোগিতায় ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে নবম পর্যন্ত এবং দশম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত দুটি ক্যাটাগরিতে শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। চতুর্থ দিনশেষে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। মজার বিষয় হলো এ আয়োজনে কেউই প্রথম বা দ্বিতীয় হননি, বিজয়ী হয়েছেন। জুনিয়র গ্রুপে পুরস্কারপ্রাপ্ত হয়েছেন- বর্ডারগার্ড পাবলিক স্কুলের নবম শ্রেণির তিন শিক্ষার্থীর ‘ওয়াস্ট ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট’, খাজাঞ্চিবাড়ী ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের নবম শ্রেণির তিন শিক্ষার্থীর প্রজেক্ট ‘মডার্ন সিটি’, শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজেরও নবম শ্রেণির ‘পলুশন ফ্রি ডিজিটাল ভিলেজ’, ব্লু বার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজেরও নবম শ্রেণির তিন শিক্ষার্থীর ‘বেনিফিশিয়াল প্রোজেক্ট অ্যাগেইনিস্ট কার্বন-ডাই-অক্সাইড’ প্রজেক্ট ও আলু থেকে আটা প্রজেক্ট। এ ছাড়া একই স্কুলের ‘বায়োফুয়েল’ প্রজেক্টকে গুরুত্বপূর্ণ সম্মাননা দেওয়া হয়। সিনিয়র গ্রুপে শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুটি গ্রুপের ‘এনভায়রনমেন্টাল ফ্রেন্ডলি কয়ল বেসড পাওয়ার প্লান্ট’, ‘স্মার্ট হসপিটাল’ ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের একাদশ শ্রেণির তিন শিক্ষার্থীর ‘হিউম্যান ডিটেকট্যাটবল কার’ প্রজেক্ট ও সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের তিন শিক্ষার্থীর প্রজেক্ট ‘অটোমেটিক সোলার সিস্টেম’ বিজয়ী হয়। এ গ্রুপে সিলেটের স্কলার্সহোম কলেজের শিক্ষার্থীর প্রজেক্ট ‘বায়োডিগ্রাড্যাবল প্লাস্টিক’ গুরুত্বপূর্ণ সম্মাননা পায়। এ ছাড়া অনবদ্য পারফরম্যান্সের জন্য মোস্ট প্রমিজিং টিমের স্বীকৃতি পায় জালালাবাদ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের নাঈম, সাজিদ ও তন্ময়। ‘প্রজেক্ট গ্রুপ’ নামক এই টিমটির বিভিন্ন প্রজেক্টের মধ্যে ছিল ‘এয়ারকুলার, ইলেকট্রিক শো, হেডফোন, মাইক্রোফোন, ফায়ারিং মেশিন’। শেষদিনে সমাপনী অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদুর রহমান। বক্তারা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এভাবে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের উপযোগী বিভিন্ন বিজ্ঞানধর্মী আয়োজন করলে দেশে বিজ্ঞানমুখী শিক্ষার প্রসার অনেকাংশেই বেড়ে যাবে। শেষে বিজ্ঞানের বিভিন্ন জিনিস প্রদর্শনীর জন্য জন্য দেশের বিভিন্ন স্কুল থেকে আগত জয়ী খুদে বিজ্ঞানীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন আমন্ত্রিত অতিথিরা।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top