একজন প্রকৃত ইমানদারের বৈশিষ্ট্য
আল্লাহ্ তাআলা সবকিছু সৃষ্টি করেছেন একটি মূল থেকে। এরশাদ হচ্ছে—
يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَأُنْثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ
( أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللهَِّ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللهََّ عَلِيمٌ خَبِيرٌ ﴿ ١٣ ﴾ (سورة الحجرات : ١٣
‘হে লোকসকল ! আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী হতে সৃষ্টি
করেছি, পরে তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিনড়ব জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা
একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পার। তোমাদের মাঝে যে অধিক মুত্তাকী সে-
ই আল্লাহ্র নিকট অধিক সম্মানিত। আল্লাহ্ তাআলা সবকিছু জানেন এবং
সবকিছুর খবর রাখেন।১
রসুল(সঃ) মক্কা বিজয়ে ঘোষণা করে বলেন, হে
কোরাইশ সম্প্রদায় ! আল্লাহ্ তাআলা জাহেলী অহমিকা ও বাপ-দাদার বড়াই
মিটিয়ে দিয়েছেন। সকল মানুষ আদম সন্তান, আর আদম মাটির সৃষ্টি।
আল্লাহ্ তাআলা মানুষ সৃষ্টি করে তাঁকে চেনার মত যোগ্যতা দিয়েছেন। সাথে
সাথে তিনি রব ও উপাস্য হওয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট দলিল-প্রমাণ উপস্থাপন
করেছেন, যেগুলো মানুষের বিবেক, অনুভূতি ও আত্মাকে সম্বোধন করে।
মানুষকে তাঁর পরিচয় লাভ না করার কারণে শাস্তি প্রদানের জন্যে এতটুকুর
উপরই ক্ষান্ত হননি ; বরং রাসূল প্রেরণ করে কিতাব নাযিল করেছেন, যাতে
মানব প্রকৃতিকে সম্বোধন করে সঠিক ধারণার বীজ বপন করা যায়। এ বিষয়ে
প্রচুর আয়াত রয়েছে। এরশাদ হচ্ছে—
فَأَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفًا فِطْرَةَ اللهَِّ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لَا تَبْدِيلَ لخَِلْقِ اللهَِّ ذَلِكَ
الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ ﴿ ٣٠ ﴾ مُنِيبِينَ إِلَيْهِ وَاتَّقُوهُ وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ
(٣١− وَلَا تَكُونُوا مِنَ المُْشْرِكِينَ ﴿ ٣١ ﴾.(الروم: ٣٠
তুমি একনিষ্ঠভাবে নিজেকে দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত কর। আল্লাহ্ তাআলার
প্রকৃতির অনুসরণ কর, যে প্রকৃতি অনুযায়ী তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন, আল্লাহ্
তাআলার সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটা সহজ-সরল দ্বীন, কিন্তু অধম মানুষ
জানে না। বিশুদ্ধ চিত্তে তার অভিমুখী হয়ে তাকে ভয় কর, তোমরা নামায কায়েম
কর, এবং মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।২
১ হুজুরাত : ১৩
২ সূর আর Ñরূম : ৩০-৩১
আল্লাহ্ তাআলা মানুষের নিকট এরকমই চেয়েছেন। কিন্তু মানুষ সংকীর্ণ
বিবেক ও কুপ্রবৃত্তির কারণে এদিক-সেদিক ছুটোছুটি করে, বিভ্রান্ত হয়ে নানা পথ
ও পন্থা অবলম্বন করে। আল্লাহ্ তাআলা মানুষকে আকল-বুদ্ধি-বিবেক ও আত্মা
দিয়েছেন। যে ব্যক্তি এক দিককে অপরটির উপর প্রাধান্য দেবে, সে সঠিক রাস্তা
থেকে সরে যাবে।
ইসলামী ব্যক্তিত্বের গুণ-বৈশিষ্ট্য
আল্লাহ্ তাআলা মুসলমানের জন্য এমন কিছু গুণাবলী নির্ধারণ করেছেন,
যেগুলোর মাধ্যমে তাদের সহজেই অন্যদের থেকে পৃক করা যায়।
(১) মুসলমান আকীদা ও বিশ্বাসে দৃঢ় :—
মুসলিম আল্লাহ্কে প্রভু, ইসলামকে ধর্ম ও মোহাম্মদ (সঃ)
কে নবী ও রাসূল হিসেবে বিশ্বাস করে। আল্লাহ্, তদীয় ফেরেশতাকুল,
কিতাব, রাসূলগণ, আখেরাত ও ভাল-মন্দ তাকদীরের উপর বিশ্বাস রাখে।
ঈমানের ভিত্তির উপর একজন মুসলমান জীবনকে পরিচালিত করে, যা তাকে
আচার-ব্যবহার, চলাফেরা, উদ্দেশ্য-লক্ষ্য ও লেনদেনে দিক নির্দেশনা দেবে। এর
উপরই প্রতিষ্ঠিত হবে তার জীবন-জীবিকা ও সময়। নির্ধারিত হবে তার দৃষ্টিভঙ্গি
এবং তার কাজকর্ম চলবে সুস্পষ্ট প্রামাণ্যতার উপর, যাতে কোন প্রকার
পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও চিন্তা-বিভ্রান্তি থাকবে না।
ইসলাম এ বিষয়টির উপরই বিশেষ জোর দিয়েছে ; কেননা এ জীবনে
মানুষের চলার সূচনা কি হবে সেটা একমাত্র ইসলামই নির্ধারণ করতে পারে।
আল্লাহ্ তাআলা বলেন—
فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهَُّ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالمُْؤْمِنَاتِ ﴿ ١٩ ﴾ (سورة
( محمد: ١٩
‘সুতরাং তুমি জেনে রাখ, আল্লাহ্ ছাড়া (প্রকৃত) কোন মাবুদ নেই, ক্ষমা
প্রার্থনা কর তোমার এবং মুমিন নর-নারীদের ত্র“টির জন্যে।’৩
আল্লাহ্ তাআলা বলেন—
آَمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ وَالمُْؤْمِنُونَ
كُلٌّ آَمَنَ بِاللهَِّ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لَا
نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْ رُسُلِهِ وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ المَْصِيرُ
( ٢٨٥ ﴾ (سورة البقرة : ٢٨٥ ﴿
৩ মুহাম্মদ : ১৯
‘রাসূল বিশ্বাস রাখেন ঐ সমস্ত বিষয় সম্পর্কে যা তার পালনকর্তার পক্ষ
থেকে তার নিকট অবতীর্ণ হয়েছে, এবং মুসলমানরাও। সবাই বিশ্বাস রাখে
আল্লাহ্র প্রতি, তার ফেরেশতাদের প্রতি, গ্রন্থসমূহের প্রতি এবং তার
পয়গম্বরগণের প্রতি। তারা বলে : আমরা তাঁর রাসূলগণের মাঝে কোন তারতম্য
করি না।
সাম্প্রতিক মন্তব্য