logo
news image

মাত্র ৫ মিনিটে ক্যানসার শনাক্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা।  
রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে দ্রুত ক্যানসার শনাক্ত করার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। পাঁচ মিনিটের মধ্যে এই প্রযুক্তি বলে দেবে কোনো ব্যক্তির শরীরে ক্যানসার আছে কি নেই। এতে খরচ পড়বে ৫০০ টাকারও কম। আগামী এক বছরের ভেতরে মানুষ এই প্রযুক্তির সুফল পাবে।
বুধবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, এটি যুগান্তকারী উদ্ভাবন। বাংলাদেশের জন্য এটা ঐতিহাসিক ঘটনা।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মূল কাজ হচ্ছে গবেষণা। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) গবেষকরা রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যান্সার রোগ শনাক্তকরণের যে পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন তা আমাদের জন্য বড় একটা সাফল্য।
তিনি বলেন, এই সাফল্য আমাদের জন্য ‘ল্যান্ডমার্ক’ হয়ে থাকবে এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় এই গবেষণা থেকে অনুপ্রাণিত হবে।
সাধারণত বেশিভাগ সময় ক্যান্সার রোগ শনাক্ত হয় রোগের শেষ পর্যায়ে। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই ডাক্তারদের খুব একটা কিছু করার থাকে না। বিশ্বে এখন পর্যন্ত এমন কোনো পদ্ধতি আবিষ্কার হয়নি, যার মাধ্যমে আগে থেকেই ক্যান্সার শনাক্ত করা যায়।
তবে শুরুতেই ক্যান্সার শনাক্তে সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন করেছেন শাবির এক দল গবেষক। তাদের গবেষণায় শুধু রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই ক্যান্সারের ভবিষ্যদ্বাণী করার প্রযুক্তি ব্যবহারের সম্ভাবনা উন্মোচিত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্পের (হেকেপ) আওতায় শাবির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হকের নেতৃত্বে এক দল গবেষক নন-লিনিয়ার অপটিকস গবেষণায় ক্যান্সার শনাক্তকরণের সাশ্রয়ী প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। গবেষক দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন- প্রফেসর ড. শরীফ মো. শরাফ উদ্দিন, মনজ কান্তি বিশ্বাস ও এনামুল হক।
শিক্ষামন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, ২০১৫ সালের দিকে শাবির এই নন-লিনিয়ার অপটিকস রিসার্চ গ্রুপটি গবেষণার ব্যবহারিক দিক নিয়ে কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়। গ্রুপটি হেকেপ’র উইন্ডো ফোরের আওতায় ইউনিভার্সিটি-ইন্ডাস্ট্রি সমন্বিত গবেষণার জন্য একটি উদ্ভাবনীমূলক পরিকল্পনা জমা দেয়।
পরিকল্পনাটি ছিল ক্যান্সার রোগাক্রান্ত ব্যক্তির রক্তের নন-লিনিয়ার বৈশিষ্ট পরিমাপ করে ক্যান্সারের সম্ভাব্য উপস্থিতি ও অবস্থা চিহ্নিত করার একটি প্রক্রিয়া উদ্ভাবন। অর্থাৎ প্রচলিত বায়োকেমিক্যাল ক্যান্সার নির্দেশক বায়োমার্কারের পরিবর্তে একটি অপটিক্যাল বায়োমার্কার উদ্ভাবন করা।
তিনি বলেন, ‘সহজ ভাষায় বলা যায়- ক্যান্সার রোগাক্রান্ত রোগীদের রক্তে এমন কিছু একটা অনুসন্ধান বের করা যার নন-লিনিয়ার বৈশিষ্ট্যটি ক্যান্সার রোগের সম্ভব্যতার একটি ধারণা দিবে। একই সঙ্গে খুব সহজে নন-লিনিয়ার বৈশিষ্ট্যটি অনুসন্ধানের জন্য একটা সহজ যন্ত্রও তৈরি করার পরিকল্পনা করা হয়।’
‘এই উদ্ভাবনী প্রকল্পটি সহজভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে শুধু ক্যান্সার রোগাক্রান্ত রোগীদের রক্ত নয়, অন্য যে কোনো স্যাম্পলের নন-লিনিয়ার ধর্ম খুবই সহজে সুক্ষ্মভাবে পরিমাপ করা সম্ভব হবে’ যোগ করেন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেন, ২০১৬ সালের মার্চ মাসে ‘নন-লিনিয়ার অপটিকস ব্যবহার করে বায়োমার্কার নির্ণয়’ শীর্ষক প্রকল্পটি হেকেপ’র আওতায় সিপি-৪০৪৪ হিসেবে গৃহীত হয়। এ প্রকল্পের অংশ হিসেবে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে নন-লিনিয়ার বায়ো-অপটিকস রিসার্চ ল্যাবরেটরি নামে একটি নতুন ল্যাবরেটরি গড়ে তোলা হয়।
এ ল্যাবরেটরিতে ক্যান্সারে আক্রান্ত মানুষের রক্তের সিরামে শক্তিশালী লেজার রশ্মি পাঠিয়ে নন-লিনিয়ার ধর্মের সূচক পরিমাপ করার কাজ শুরু হয়েছে। ক্যান্সার রোগ নির্ণয়ে বায়োকেমিক্যাল প্রক্রিয়ায় যে বাড়তি রি-এজেন্ট ব্যবহার করতে হয়, শাবিতে উদ্ভাবিত নতুন পদ্ধতিতে তার কিছুরই প্রয়োজন হয় না।
নাহিদ বলেন, এই পদ্ধতিতে একজন রোগীর দেহে কোনো ধরনের যন্ত্রপাতি প্রবেশ না করিয়ে প্রচলিত পদ্ধতি বাইরে নতুন একটা পদ্ধতিতে রক্ত পরীক্ষা করে সম্ভাব্য ক্যান্সারের ভবিষৎবাণী করার একটি সম্ভাবনা উন্মোচিত হয়েছে।
প্রাথমিক পরীক্ষার ফলাফল পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ‘নন-লিনিয়ার অপটিক্যাল ধর্ম ব্যবহার করে ক্যান্সার রোগীর শরীরের তরল পদার্থ ব্যবহার করে ক্যান্সার নির্ণয়ের পদ্ধতি’ শীর্ষক একটি পেটেন্টের আবেদন একযোগে বাংলাদেশ ও ইউএস পেটেন্ট অফিসে জমা দেয়া হয়েছে।
‘এই নতুন পদ্ধতিটি আগে কখনোই কোথাও ব্যবহৃত হয়নি। কাজেই আশা করা যায়, ক্যান্সার রোগ নির্ণয়ের সম্পূর্ণ নতুন একটি পদ্ধতি হিসাবে এটি সম্ভাবনার নতুন একটি দ্বার উন্মোচন করেছে’ বলেন শিক্ষামন্ত্রী।
গবেষক দলের প্রধান শাবি অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক বলেন, ‘এই গবেষণা মূলত ক্যান্সার নির্ণয়ের সহজ একটা পদ্ধতি। আমরা হেকেপ’র সহায়তায় এই ভিন্নধর্মী গবেষণা করেছি। তবে এ বিষয়ে আরো অনেক উচ্চতর গবেষণা প্রয়োজন।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান, শাবি ভিসি অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন, শিক্ষাবিদ ড. জাফর ইকবাল প্রমুখ।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top