logo
news image

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী।পালিত

বিনোদন ডেস্ক।  ।  
একদিকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যের আগুন, অন্যদিকে অন্যায়-অবিচারের অগ্নিজ্বালা। এর মধ্যেও বসে যিনি তাঁর অগ্নিবীণায় তুলেছেন প্রেম, প্রকৃতি আর মানবতার সুর, তিনি কাজী নজরুল ইসলাম।  সোমবার (২৭ আগস্ট) জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী। কবির চিরবিদায়ের এই দিনে তাঁকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করেছে জাতি। অগণিত অনুরাগী শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার ফুলে ফুলে ঢেকে দিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে কবির অন্তিমশয্যা।
সকাল থেকেই কবির অনুরাগীরা ফুল নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদসংলগ্ন তাঁর সমাধিতে। শুরুতে কবি পরিবারের পক্ষে খিলখিল কাজী, বাবুল কাজী প্রমুখ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
কবির নাতনি খিলখিল কাজী বলেন, ‘নজরুল ইসলাম ছিলেন সবার কবি, মানুষের কবি। তাঁর জীবনদর্শন ছিল অসাম্প্রদায়িক, তিনি মানুষকে ভালোবাসতেন। আমরা মানুষ—এটাই ছিল তাঁর আদর্শ। এই আদর্শকে যদি আমরা সবার কাছে পৌঁছে দিতে পারি, তবেই আমরা শোষণমুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ একটা সমাজ, যেটা তিনি সব সময় স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা আমরা গড়তে পারব।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই সময়ে বিশ্বে যেখানে ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথাচাড়া দিচ্ছে, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, তখন নজরুল দর্শনের চর্চা খুবই জরুরি।’
এরপর কবি, সাহিত্যিক ও বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদন করে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষে কবির সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। জাতীয় কবি অসাম্প্রদায়িক ও মানবতাবাদী চেতনায় সমৃদ্ধ ছিলেন মন্তব্য করে মন্ত্রী অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়তে নজরুলের চেতনায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
কবির সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জাসাসসহ দলটির সহযোগী সংগঠনসমূহ। একে একে ফুল দেয় উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, জাতীয় কবিতা পরিষদসহ আরও কিছু সংগঠন।
সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ফুল দেওয়ার পর সমাধি প্রাঙ্গণে সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নজরুল গবেষক ও জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী, সংগীত বিভাগের চেয়ারপারসন টুম্পা সমদ্দার ও সহযোগী অধ্যাপক মোহসিনা আক্তার খানম (লীনা তাপসী), বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক ও বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. এনামউজ্জামান প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী।
সমাধি প্রাঙ্গণে আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য মুহাম্মদ সামাদসমাধি প্রাঙ্গণে আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য মুহাম্মদ সামাদঅধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ‘কবি কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় কবি। তিনি মানুষের কবি, সাম্যের কবি। তাঁর চিন্তা ও সমাজভাবনা আমাদের পথ দেখাতে সাহায্য করেছে। বাঙালি সমাজ ও সংস্কৃতি বিনির্মাণে তাঁর সৃষ্টিকর্ম সব সময় আমাদের প্রেরণা দেবে।’ অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নজরুলের বিভিন্ন পর্যায়ের সংগীত পরিবেশন করেন।
সমাধিতে ফুল দেওয়া ছাড়াও মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান অনুষ্ঠান আয়োজন করে। জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করছে। বিটিভিসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো কবির ওপর নানা অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে।
বিকেলে নজরুল ইনস্টিটিউট জাতীয় জাদুঘরে নজরুল পুরস্কার প্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এবার ‘নজরুল পুরস্কার’ পাচ্ছেন নজরুলসংগীত গবেষক অধ্যাপক ড. রশিদুন নবী এবং নজরুলসংগীতশিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। আজ সোমবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে জাতীয় জাদুঘরের বেগম সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের এই পুরস্কার প্রদান করা হবে। কবি নজরুল ইনস্টিটিউট ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ।
আগামী বৃহস্পতিবার বিকেল চারটায় বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে একক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ‘নজরুলকাব্যে মিথিক-ঐতিহ্যিক প্রতিমা: ফিরে দেখা’ শীর্ষক একক বক্তৃতা প্রদান করবেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।
১৯৭৬ সালের এই দিনে (১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্র) তিনি ঢাকায় তদানীন্তন পিজি হাসপাতালে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top