logo
news image

মালয়েশিয়ায় মাহাথিরের ৫ সারথি

২০০৩ সালে মাহাথির বিন মোহাম্মদ যখন স্বেচ্ছায় প্রধামনত্রীর পদ ছাড়েন তখন মালয়েশিয়া ছিল উন্নতির শীর্ষে। অনেকটা শূন্য থেকে শীর্ষে নিয়ে এসেছিলেন তিনি দেশটিকে। সেই মাহাথিরকেই ১৫ বছর পর আবারও আসতে হয় দেশের হাল ধরতে। ৯২ বছর বয়সে আবারও ক্ষমতার আসনে বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবীদ।

এবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথে নেওয়ার পর থেকেই কাজে নেমে পরেছেন মাহাথির। নির্বাচনী প্রচারণায় দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে নিয়োগ দিয়েছেন পাঁচ জন উপদেষ্টা। নিয়োগ প্রাপ্তরা এর আগেও মাহাথিরের বিশ্বস্ত সহচর হিসেবে ছিলেন। পুরনো এই পাঁচ কান্ডারীকে সাথে নিয়েই অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে নতুন করে কাজ করবেন আধুনিক মালয়েশিয়ার জনক বলে পরিচিত মাহাথির বিন মোহাম্মদ।

এই পাঁচজন ব্যক্তিকে সামগ্রিকভাবে বলা হচ্ছে ‘বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কাউন্সিল’। এরই মধ্য তাঁরা বিনিয়োগকারী এবং ক্রেডিট রেটিং ফার্মগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিভিন্ন দিকনির্দেশনাও দেওয়া শুরু করেছেন এই বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। অর্থমন্ত্রী লিম গুয়ানের সঙ্গে এই কাউন্সিলের সদস্যরা মাহাথিরের পক্ষে কাজ করবেন।

মাহাথিরের উপদেষ্টা দলে আছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর, ধনকুবের ব্যবসায়ী, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানির সাবেক প্রধান নির্বাহী। তাঁরা অগ্রাধিকারের তালিকাও ঠিক করে ফেলেছেন। জ্বালানিতে ভর্তুকি পুনর্বহাল, বড় আকারের সরকারি প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা এবং ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধিসহ কর পুনর্মূল্যায়ন নিয়ে তাঁরা কাজ শুরু করেছেন।

বিশিষ্ট ব্যক্তির কাউন্সিলে থাকা এই পাঁচ সদস্যদের পরিচয়

 

ডাইম জয়নুদ্দিন

ডাইম জয়নুদ্দিন মাহাথির মোহাম্মদের দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত এক সহযোগী। সংকট মুহূর্তে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে মাহাথির যাঁদের ওপর ভরসা করতেন, জয়নুদ্দিন তাঁদের একজন। ৮০ বছর বয়সী ডাইম পড়াশুনা করেছেন আইন বিষয়ে। যুক্তরাজ্য থেকে নিয়েছেন বিশেষ প্রশিক্ষণ। ক্যারিয়ারে আবাসন খাত ও ব্যাংকে দীর্ঘ সময় কাজ করেছেন ডাইম জয়নুদ্দিন। জড়িত ছিলেন সরকারের সাথেও।

১৯৮৪-১৯৯১ পর্যন্ত প্রায় ছয় বছর মালয়েশিয়ার অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এশিয়ায় আর্থিক সংকট-পরবর্তী সময়ে ১৯৯৯-২০০১ পর্যন্ত দ্বিতীয়বার অর্থমন্ত্রী ছিলেন। মাহাথিরের অন্যতম এই সহযোগীর মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের সময় সড়ক, স্কুল এবং অন্য প্রকল্পগুলোকে এগিয়ে নেন। ব্যাংকের সুদ কমিয়ে আনতেও তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। ডাইম জয়নুদ্দিন মাহাথিরের এলাকার লোক। দুজনেরই বাড়ি খেদায় প্রদেশে।

জেতি আকতার আজিজ
মালয়েশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রথম এবং একমাত্র নারী গভর্নর জেতি আকতার আজিজ। দীর্ঘ ১৬ বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে ২০১৬ সালে পদত্যাগ করেন জেতি। ৭০ বছর বয়সী  জেতি আকতার পড়াশুনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ডক্টরেট ডিগ্রি নেন তিনি। হয়ে ওঠেন ঝানু ব্যাংকার। ব্যাংক নেগারা মালয়েশিয়ার বিশ্বস্ততা ও স্বাধীন করার ক্ষেত্রে বড় অবদান রেখেছেন তিনি।

কয়েক দশক আগে এশিয়ার মন্দার পরে জেতি আকতার আজিজের গৃহীত নীতির কারণে মালয়েশিয়া অর্থনৈতিক সমস্যা কাটিয়ে ওঠতে সক্ষম হয়। আইএমএফসহ বিভিন্ন বিনিয়োগকারীদের ফিরিয়ে দিয়ে অর্থনীতিকে মজবুত করার অন্যতম কারিগর ছিলেন জেতি আকতার আজিজ।

হাসান ম্যারিকান
হাসান ম্যারিকান মাহাথিরের সময়ে রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানির দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৯৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় মালিকানার পেট্রলিয়া ন্যাশিওনাল বারহাদের প্রধান নির্বাহী ছিলেন তিনি। ৬৫ বছর বয়সী হাসান ম্যারিকানের নেতৃত্বেই একটি ছোট্ট তেল কোম্পানি থেকে বিশ্বের ৫০০ শীর্ষ কোম্পানির কাতারে উঠে আসে পেট্রোনাস। মালয়েশিয়ার এই তেল কোম্পানি এখন বিশ্ববাজারে অন্য বড় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে। জ্বালানি শিল্পে তিন দশকের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হাসান ম্যারিকানের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েছে সিঙ্গাপুর সরকার। সেমবকর্প মেরিন লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

জোমো কোয়ামে সুন্দরম

মাহাথিরের দলে ষাটোর্ধ্ব আরেক সৈনিকের নাম জোমো কোয়ামে সুন্দরম। ৬৫ বছর বয়সী জোমো একজন বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিষয়ক সহকারী মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করা জোমো কোয়ামে মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক অর্থনীতি নিয়ে বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন। তাঁর লেখা বইয়ের মধ্যে ‘এম ওয়ে: মাহাথির’স ইকোনমিক পলিসি লিগেসি’ বেশ জনপ্রিয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের অর্থনৈতিক নীতির কঠোর সমালোচক ছিলেন জোমো কোয়ামে সুন্দরম। নাজিব রাজাকের রেল প্রকল্পের কট্টর সমালোচক জোমো কোয়ামে সুন্দরম। তিনি বলতেন, “এ প্রকল্প কোনো অর্থনৈতিক মূল্য বহন করবে না”। মালয়েশিয়ার চীনের বিনিয়োগেরও সমালোচক জোমো কোয়ামে সুন্দরম।

রবার্ট কুক
৯৪ বছর বয়সী রবার্ট কুকের নাম ‘সুগার কিং’।যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীনতার পরপরই চিনির ব্যবসা করে প্রচুর সম্পদের মালিক হন তিনি। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন একজন ঝানু ব্যবসায়ী হিসেবে। মালয়েশিয়ার পাশাপাশি পরবর্তী সময় সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ে ব্যবসা বিস্তার করেন তিনি। বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাম তেল কোম্পানি থেকে শুরু হয়ে বেইজিংয়ের সবচেয়ে উঁচু ভবনেও তাঁর বিনিয়োগ রয়েছে। তিনি চীনের সঙ্গে মালয়েশিয়ার সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করছেন।

সূত্র: রয়টার্স


সাম্প্রতিক মন্তব্য

Top