রাজা জারক্সিস গ্রিক অভিসারে উন্মাদ এক রাজার ইতিকথা
দূরের উত্তাল সাগরের গর্জন এসে ভেঙে পড়ছে পারস্যের সর্বক্ষমতার অধিকারী রাজা জারক্সিসের প্রাসাদে। সময় তখন গভীর রাত। গোলাকার চাঁদ, কয়েক লক্ষ তারকা, রাজপ্রাসাদের শত শত প্রহরী এবং নিদ্রাহীন রাজা জারক্সিস ব্যতীত তখন পারস্যের একটি মানুষও জেগে নেই। পিতামহ এবং পিতার কল্যাণে বিশাল সাম্রাজ্যের অধিকারী হয়ে উঠেছেন তিনি। যতদূর চোখ যায় শুধু পারস্য সাম্রাজ্যের ঝাণ্ডা উড়তে দেখা যায়। তার প্রজারা তাকে ‘রাজাদের রাজা’ বলে সম্বোধন করে। কিন্তু এত প্রাচুর্য্যের মাঝেও তার চোখে কোনো ঘুম নেই। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া রাজত্ব নিয়ে তিনি খুশি হতে রাজি নন। তাই শত ঐশ্বর্যের মাঝেও যুদ্ধক্ষেত্রের উগ্র দামামা তার অস্তিত্বকে আকৃষ্ট করতো।রাজার অস্থিরতার কারণ বুঝতে পারলেন তার চাচাতো ভাই মারদোনিয়াস। মারদোনিয়াস পারস্যের সেনাপতি ছিলেন। তিনিও যুদ্ধে যাওয়ার জন্য সুযোগ খুঁজছিলেন। এই সুযোগ তিনি হাতছাড়া করতে চাইলেন না। জারক্সিসকে তিনি মন্ত্রণা দেন, “আমাদের পরলোকগত রাজা এবং তোমার পিতা সবকিছু জয় করতে পেরেছেন। তবে এতকিছুর মাঝেও তিনি এক জায়গায় ব্যর্থ হয়ে ফিরেছেন বারবার। আর সেটা হচ্ছে গ্রিক সাম্রাজ্য।” গ্রিক সাম্রাজ্যের কথা শুনতেই জারক্সিসের গায়ের রক্ত টগবগ করে ফুটতে থাকলো। মনে পড়ে গেলো ম্যারাথন যুদ্ধে পিতা দারিওসের শোচনীয় পরাজয়ের করুণ ইতিহাস। এবার দারিওসের অধরা গ্রিক সাম্রাজ্যকে নিজের দখলে নিয়ে আসতে হবে। আর তা করতে পারলেই নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে পারবেন তিনি। নিজের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট জারক্সিস দৃষ্টি ফেলেন দূর সমুদ্রের দিকে। ঠিক এসময়ে ভূমধ্যসাগরের তীরে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে তার শত্রু গ্রিকরা।
বিশালদেহী স্পার্টানদের হুংকারে কম্পিত হচ্ছে গ্রিসের আকাশ বাতাস। আর ওদিকে লাখ লাখ সেনাবাহিনীর পদক্ষেপে আন্দোলিত হচ্ছে গ্রিসের শক্ত মাটি। যেন রিখটার স্কেলের ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে ধ্বসে যাচ্ছে পুরো গ্রিস। স্পার্টানদের দমন করতে এই বিশাল বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে নিষ্ঠুর রাজা জারক্সিস। সিনেমাপ্রেমী মানুষদের নিকট জারক্সিসের চিত্রটা ঠিক এরূপ।ফ্রাঙ্ক মিলার রচিত বিখ্যাত সচিত্র-উপন্যাস ‘থ্রি হান্ড্রেড‘-এর মাধ্যমে আমরা অনেকেই জারক্সিসের সাথে পরিচিত হই। যেহেতু ঔপন্যাসিক মিলার স্বাধীনভাবে গল্পের খাতিরে জারক্সিসকে নিজের মনের মতো চিত্রায়িত করেছেন, তাই ইতিহাসে বর্ণিত জারক্সিসের গল্পের সাথে এর বেশ কিছু তফাৎ পরিলক্ষিত হয়। জারক্সিসকে গ্রিক এবং ইউরোপীয় ইতিহাসবিদগণ একজন লোভী-অত্যাচারী শাসক হিসেবে বর্ণনা করলেও পারস্যের অনেক ঐতিহাসিক পাণ্ডুলিপি এর সাথে দ্বিমত প্রকাশ করেছে। দু’দেশের ইতিহাসবিদগণ নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে জারক্সিসকে বর্ণনা করার ফলে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
অভিষেকের পর চাটুকার দ্বারা পরিবেষ্টিত জারক্সিসের রাজকীয় জীবনধারা চলতে থাকে আপন খেয়ালে। কিন্তু তিনি বেশিদিন এই সুখ সহ্য করতে পারলেন না। একসময় তিনি বুঝতে পারলেন, দারিওসের পুত্র হিসেবে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হলে তাকে আরো কঠোর হতে হবে। জয় করতে হবে পুরো বিশ্ব। সেই নেশা থেকে জারক্সিস পারস্য ত্যাগ করে গ্রিক অভিযানের স্বপ্ন দেখতে থাকেন।
মিশর সমস্যা সমাধানের পর জারক্সিস এবার গ্রিসের দিকে পূর্ণ মনোযোগ দিলেন। প্রায় চার বছর ধরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সামর্থ্যবান যুবকদের ধরে এনে ভর্তি করা হলো পারস্য বাহিনীতে। বিভিন্ন দিক থেকে অস্ত্র এসে জমা হতে থাকলো পারস্য ভাণ্ডারে। এমনকি অধীনস্ত রাজ্যগুলোর রাজপরিবারের সদস্যদেরও নিস্তার দেননি জারক্সিস। রাজা ক্রোসাসের বংশধর পিথিয়াসের পাঁচ পুত্রকে বলপূর্বক সেনাবাহিনীতে ভর্তি করান জারক্সিস। পিথিয়াস এই ঘটনায় দিশেহারা হয়ে পড়লেন। তিনি জারক্সিসকে প্রচুর উপঢৌকন এবং অর্থের বিনিময়ে তার সন্তানদের মুক্তির আবেদন করেন। কিন্তু সামান্য উপঢৌকনের লোভে পা দিতে নারাজ জারক্সিস। তিনি কঠোর চিত্তে এই নিবেদন প্রত্যাখ্যান করেন। তবে একদম খালি হাতে ফিরতে হয়নি পিথিয়াসকে। পিথিয়াসের ত্যাগ স্বীকারকে সম্মানিত করে জারক্সিস তাকে খাজাঞ্চি হিসেবে নিয়োগ দান করেন।প্রাচীনকালে যুদ্ধে রওয়ানা দেয়া মানে শুধু বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে দামামা বাজিয়ে যুদ্ধের ময়দানে পদার্পণ করা ছিল না। যুদ্ধের পূর্বে রাজাকে পুরোহিতদের সংকেতের জন্য অপেক্ষা করতে হতো। পুরোহিতগণ বিভিন্ন লক্ষণ বিচার করে রাজাকে সবুজ সংকেত প্রদান করা মাত্র বেজে উঠতো মাদল। জারক্সিসও তার পুরোহিতদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু পুরোহিতরা তার সামনে আসতে ভয় পাচ্ছিলো। কারণ চাঁদের অবস্থান এবং প্রকৃতির বিভিন্ন লক্ষণ বিচার করে এই যাত্রা শুভ হবে বলে মনে হচ্ছে না তাদের। জারক্সিস এই কথা শুনে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে গেলেন। তিনি পুরোহিতদের নির্দেশকে তোয়াক্কা না করে দ্রুত গ্রিসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবার সিদ্ধান্ত নিলেন।
ওদিকে বেচারা পিথিয়াস বুঝতে পেরেছিলেন, রাজার এই অভিযান সফল হবে না। তাই তিনি জারক্সিসের নিকট কাতর আবেদন করলেন যেন তার জ্যেষ্ঠ পুত্রকে এই যুদ্ধ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। জারক্সিস ক্রুদ্ধ হয়ে গেলেন পিথিয়াসের প্রতি। এর অর্থ দাঁড়ায়, পিথিয়াস সরাসরি রাজা জারক্সিসের সফলতাকে অস্বীকার করছে। জারক্সিস গ্রিক অভিযানের পূর্বে পিথিয়াসকে কঠোর শাস্তি দিতে চাইলেন। তিনি তার জ্যেষ্ঠ পুত্রকে সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কার করে আটক করলেন। তারপর জনসম্মুখে তাকে কেটে দু’টুকরা করে ফেলেন। তারপর সেই লাশকে জারক্সিসের যাত্রাপথের দু’ধারে দাফন করার নির্দেশ দেন। দু’দিকে পিথিয়াসের সন্তানের ছিন্ন হওয়া দেহের কবরের মাঝখান দিয়ে শৃঙ্খলভাবে এগিয়ে যেতে থাকে প্রায় দুই মিলিয়ন সেনা সম্বলিত বিশাল পারস্য বাহিনী। প্রায় চার হাজার রণতরী বোঝাই হয়ে তারা গ্রিসের পানে রওয়ানা দেয়। জাহাজ চালনার সুবিধার্থে জারক্সিসের প্রকৌশলীরা শত শত প্রশস্ত খাল খনন করেছিলেন, যার ধ্বংসাবশেষ আজও জারক্সিসের সেই অভিযানের স্মৃতি নিয়ে টিকে আছে।
“আজ আমরা ইতিহাস পাল্টে দিতে এসেছি। আমি পারস্যের সীমানা এতদূর বিস্তৃত করবো যে এর একমাত্র সীমানা হবে মাথার উপর বিদ্যমান আসমান। যেন সূর্য প্রতিদিন উদয় হওয়ার পর পারস্য ব্যতীত আর কোনো রাজ্যের মাটিতে তার আলো পৌঁছে দিতে না পারে।”
গ্রিসের উপকূলে হাজারো জাহাজ নোঙর ফেলতে থাকলো। সবার সম্মুখে শাহেন শাহ জারক্সিস এভাবে চিৎকার করতে করতে যুদ্ধের উন্মাদনা ভর করিয়ে দিতে থাকলেন পারস্য যোদ্ধাদের মাথায়। পারস্যের যোদ্ধারা চিৎকার করতে করতে একযোগে এগিয়ে যেতে থাকে গ্রিসের প্রধান শহর এথেন্সের পানে। ওদিকে গ্রিকরা এথেন্সের সেনাপতির নির্দেশে দলে দলে যুদ্ধক্ষেত্রে যোগ দিতে থাকে। মাতৃভূমি গ্রিসকে রক্ষার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে সংগ্রামী গ্রিকরা। গ্রিকদের সম্মিলিত বাহিনীর সাথে পারস্য বাহিনী দুটো খণ্ডযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। কিন্তু পারস্য বাহিনীর সামনে মাটির পুতুলের ন্যায় ভেঙে যেতে থাকলো গ্রিকদের প্রতিরোধ। আরতেমিসিয়াম এবং থার্মোপিলার যুদ্ধে পারস্য বাহিনী বিজয় লাভ করে। এই জয়ের ফলে পারস্য বাহিনী সরাসরি এথেন্সে প্রবেশের সুযোগ লাভ করে এবং দ্রুত এর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। জারক্সিস তখন উন্মাদ দানবে পরিণত হয়ে গেলেন। তার নির্দেশে এথেন্সের প্রতিটি স্থাপনা এবং বাসস্থানে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। ভূমধ্যসাগরের তীরে যেন এক অভিশপ্ত আগুন খেলায় মেতে উঠেন তিনি।
এথেন্সের পতনের পর গ্রিকরা হতবিহ্বল হয়ে পড়লো। জারক্সিসের এই অতিকায় বাহিনী, যাদের পদচারণায় গ্রিসের শক্ত ভূমি কম্পিত হয়ে উঠে, তাদের সাথে গ্রিকদের একা পেরে উঠা কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না। যুদ্ধের পর যখন পারস্য শিবিরে আনন্দ উদযাপন হচ্ছিলো, ঠিক তখন শিবিরের শেষ তাবুতে এক ব্যক্তি চিন্তিত মনে একা বসে আছে। তার নাম দেমারাতাস। লোকটির নাম থেকেই বোঝা যায়, সে জন্মগতভাবে পারসি ছিল না। বরং সে ছিল এক গ্রিক নাগরিক।এক বিশেষ কারণে তাকে গ্রিস থেকে বিতাড়িত করা হলে জারক্সিস তাকে নিজ রাজ দরবারে এনে ঠাঁই দেন। সেদিন থেকে সে গ্রিকদের মনেপ্রাণে ঘৃণা করে। কিন্তু আজ তার মনের মাঝে অস্বস্তিবোধ হচ্ছে। হাজার হোক, গ্রিস তার জন্মভূমি। এভাবে এক অত্যাচারী রাজার হাতে সভ্য গ্রিকদের পরাজয় সে মেনে নিতে পারবে না। এই বিশাল বাহিনীর বিপক্ষে বিজয় লাভ করতে হলে, গ্রিকদের অবশ্যই জারক্সিসের সম্পূর্ণ পরিকল্পনা সম্পর্কে পূর্ব থেকে অবগত হওয়া জরুরি। কিন্তু পারস্য প্রহরীদের কড়া নজরকে ফাঁকি দিয়ে চিঠি তো দূরের কথা, একটি মাছিও গ্রিক শিবিরে যেতে পারে না। তাহলে উপায়?বুদ্ধিমান দেমারাতাস সম্পূর্ণ ভিন্ন পথ অবলম্বন করে গ্রিক শিবিরে বার্তা প্রেরণ করলো। সে একটি কাঠের টেবিলের উপরিভাগে খোদাই করে জারক্সিসের সম্পূর্ণ পরিকল্পনা এবং পারস্য বাহিনীর দুর্বলতা সম্পর্কে জানিয়ে একটি পত্র রচনা করলো। তারপর সে ঘন মোমের প্রলেপ দিয়ে সেটি আচ্ছাদিত করে এক প্রহরীর মাধ্যমে গ্রিক শিবিরে প্রেরণ করে দেয়। গ্রিকরা টেবিলটি উপহার হিসেবে গ্রহণ করলেও তাদের সর্দার কিংবদন্তি রাজা লিওনাইডাস এর মর্মার্থ উদ্ধারে ব্যর্থ হলেন। তার কাছে পুরো ব্যাপারটি এক গ্রিক নির্বাসিত বিশ্বাসঘাতকের প্রহসন হিসেবে লাগলো।কিন্তু তার স্ত্রী গ্রোগো বুঝতে পেরেছিলেন এটি কোনো সাধারণ টেবিল নয়। তিনি টেবিলের উপর মোমের আচ্ছাদন লক্ষ্য করে নির্দেশ দিলেন যেন এটি খুব দ্রুত সতর্কতার সাথে তুলে ফেলা হয়। মোমের আচ্ছাদন সরে যেতেই ধরা পড়লো সেই গোপন বার্তা। অভিভূত লিওনাইডাস নতুন উদ্যমে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকলেন। পর্দার আড়ালে থাকা এক দেশপ্রেমিকের বুদ্ধিমত্তায় যেন গ্রিকরা যুদ্ধে নিজেদের নতুনভাবে আবিষ্কার করলো। 1
এথেন্স পতনের পর পলাতক গ্রিক সেনারা লিওনাইডাসের অধীনে পেলোপনিস অঞ্চলে নতুন করে সেনাবাহিনী গড়া শুরু করে। ওদিকে জারক্সিস তখন তার সভাসদদের সাথে শলা-পরামর্শ করছিলেন। অনেকে বলছিলো, রাজা যেন গ্রিস অভিযানকে সফল ঘোষণা করে এথেন্সের মাটিতে পারস্যের ঘাঁটি নির্মাণ করে পারস্যে ফিরে যান। কিন্তু সেনাপতি এবং আরতেমিসিয়া নামক এক রাজকন্যার পরামর্শ অনুযায়ী জারক্সিস যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনায় অটল থাকেন।দার্শনিকদের হিসাব অনুযায়ী, ৪৮০ খ্রিস্টপূর্বের ২৩ সেপ্টেম্বর পারস্যদের সাথে গ্রিক বাহিনী লিওনাইডাস নামক এক স্পার্টান রাজার অধীনে সালামি যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। দেমারাতাসের নির্দেশ মতো গ্রিকরা প্রায় দুইশত জাহাজ নির্মাণ করে সেদিন যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। জারক্সিসের পরিকল্পনা গ্রিকদের কাছে ফাঁস হয়ে যাওয়ায় মনস্তাত্ত্বিকভাবে গ্রিকরা যুদ্ধে এগিয়ে ছিল। গ্রিক নৌবাহিনীর সাথে পারস্যের নৌবাহিনীর সরাসরি যুদ্ধ লেগে যায়। যুদ্ধের একপর্যায়ে গ্রিকরা ইচ্ছে করে পিছু হটতে থাকলে জারক্সিস উল্লাসে ফেটে পড়েন। তিনি ভেবেছিলেন গ্রিকরা পরাস্ত হয়েছে। কিন্তু ওদিকে সুকৌশলে গ্রিকরা পারস্য নৌবাহিনীকে গ্রিক উপসাগরে প্রবেশ করিয়ে কোণঠাসা করে ফেলছিলো।কয়েক মুহূর্ত পরে কোনো কিছু বুঝে উঠার পূর্বে ভূমধ্যসাগরীয় বায়ু তার দিক পরিবর্তন করে বিপরীত দিকে বইতে শুরু করলে হতবিহ্বল হয়ে পড়ে হাজার হাজার পারস্য জাহাজ। বাতাসের তীব্রতার কাছে হার মানে লক্ষ লক্ষ পারসি সেনা। প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে আক্রমণ করতে থাকে গ্রিকরা। এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে প্রাণ হারাতে থাকে পারসি সেনারা। রাজকন্যা আরতেমিসিয়া যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করে। সেদিন গ্রিকদের বুনো চিৎকারের কাছে ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ে প্রজ্বলিত জারক্সিস বাহিনীর দুর্ধর্ষতা। সেদিন মাত্র কয়েক হাজার পারসি সেনা প্রাণে বেঁচে ফিরে আসতে সক্ষম হয়েছিলো। যুদ্ধের ভয়াবহতা অবলোকন করে সভাসদদের পরামর্শ অনুযায়ী জারক্সিস মারদোনিয়াসকে পুরো বাহিনীর দায়িত্ব প্রদান করে নিজে পারস্যে পালিয়ে যান।মারদোনিয়াস জারক্সিসের নামে গ্রিকদের বিরুদ্ধে প্লাটা যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। কিন্তু শাহেন শাহের অনুপস্থিতিতে যেন পারসি সেনারা ঝিমিয়ে পড়েছিলো। এর খেসারত দিতে গিয়ে যুদ্ধে প্রাণ হারায় মারদোনিয়াস। এর মাধ্যমে পারস্য বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় হয়। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে বিজয়ের বেশে সম্পূর্ণ গ্রিসের অধিকার পুনরুদ্ধার করে ফিরে আসে গ্রিক সেনারা। এথেন্সের রাজপথ জুড়ে গ্রিক সেনাদের বন্দনা সংগীতে মুখর থাকে সাধারণ জনতা। এর মাধ্যমে জারক্সিসের গ্রিক আগ্রাসনের চূড়ান্ত যবনিকাপাত ঘটে।
সাম্প্রতিক মন্তব্য